চট্টগ্রামে শুল্ক কর্মকর্তা স্ত্রীসহ দুদকের জালে

>

• গৃহিনী হালিমা ৩ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক
• স্বামী চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা
• দুজনই অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার আসামি

হালিমা বেগম একজন গৃহিণী। অথচ ৩ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক তিনি। তাঁর স্বামী আমজাদ হোসেন হাজারী চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। দুজনই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে আটকা পড়েছেন। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে ৬ জানুয়ারি নগরের ডবলমুরিং থানায় মামলা করেছে দুদক।

শুল্ক কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে চট্টগ্রাম নগর লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। সমালোচনার মুখে ২০১০ সালে তিনি পদটি ছেড়ে দেন। তিনি এখন চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট অফিসার্স এক্সিকিউটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।

দুদক সূত্র জানায়, ১৪ জানুয়ারি এই দম্পতি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাঁদের চার সপ্তাহের মধে৵ নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের আদেশ দেন। এখন তাঁরা আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে। কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।

মামলার বাদী দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সামছুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, অনুসন্ধানে কাস্টম কর্মকর্তার গৃহিণী স্ত্রীর ৩ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়ে মামলা করা হয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জন করে স্ত্রীর নামে রাখায় স্বামীকেও আসামি করা হয়েছে। স্ত্রী যে পোলট্রি খামার থেকে আয় দেখিয়েছেন, বাস্তবে সেটির কোনো অস্তিত্ব নেই।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আমজাদ হোসেন ২০০৪ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস এপ্রেইজার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। স্ত্রীর নামে স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭, ২০০৯ ও ২০১০ সালে। স্বামী অবৈধ আয়কে বৈধ করতে স্ত্রীর নামে আয়কর নথি খুলে পোলট্রি ব্যবসার অস্বাভাবিক আয় দেখিয়ে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৯৮৭-৮৮ করবর্ষ থেকে ২০১১-১২ করবর্ষ পর্যন্ত হালিমা বেগম আয় দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ টাকা এবং ব্যয় দেখিয়েছেন ৮৮ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৯ টাকা। প্রদর্শিত ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ টাকা আয়ের মধে৵ নগরের পতেঙ্গা বন্দরটিলা মৌজায় ১০ শতক জমির ওপর নির্মিত পোলট্রি খামার থেকে আয় দেখিয়েছেন ৩ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৫৫০ টাকা। বাকিগুলো অন্য খাত থেকে।

পোলট্রি ব্যবসা থেকে এত আয় সম্ভব কি না—প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ঢাকা কার্যালয়ে চিঠির মাধ্যমে দুদক জানতে চায়। সেখান থেকে জানানো হয়, ১৯৮৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দেশে ব্রয়লার জাতের মুরগি লালনপালন ছিল না। তবে লেয়ার মুরগি পালন করলে ১০ শতক জায়গায় খাঁচা পদ্ধতিতে চারটি ফ্লোরে ৮ হাজার মুরগি পালন সম্ভব। মুরগিপ্রতি গড়ে ১৮০ থেকে ২০০টি ডিম হিসাবে বছরে ১৪ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১৬ লাখ পর্যন্ত ডিম উৎপাদন সম্ভব। এর থেকে ছয় বছরে সর্বোচ্চ ৩৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এ ছাড়া আয়কর বিবরণীতে হালিমা কোনো দায়দেনা উল্লেখ করেননি। যাচাইকালেও দায়দেনা পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ৯ জানুয়ারি কাস্টম হাউসের নিচতলায় রাজস্ব কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের কক্ষের আলমারি খুলে ৬ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুদক। কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে টাকাগুলো জব্দ করা হয়। সমুদ্রগামী জাহাজের ছাড়পত্র প্রদানে ঘুষ-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে দুদকে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় নগরের বন্দর থানায় মামলা করে দুদক। পরে নাজিমকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করে।