'কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত'

সম্প্রতি ফরিদপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে নিজ খেতে সামাদ কাজী।   ছবি: প্রথম আলো
সম্প্রতি ফরিদপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে নিজ খেতে সামাদ কাজী। ছবি: প্রথম আলো
>
  • চার বিঘা জমি দিয়ে কলার চাষ শুরু সামাদের
  • বর্তমানে ৪০০ বিঘা জমিতে কলার বাগান
  • সামাদের সঙ্গে রয়েছেন আরও চার অংশীদার
  • সামাদ কাজী সফল কলাচাষি, এলাকায় সুনাম

‘কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’—খনার বচন হিসেবে পরিচিত এ কথাগুলো সত্য হয়ে উঠেছে সামাদ কাজীর জীবনে। বাড়ির পাশে চার বিঘা জমি (প্রতি বিঘা ৩৩ শতাংশ) ইজারা নিয়ে তিনি কলার চাষ শুরু করেছিলেন। এরপর শুধু তাঁর সাফল্যের গল্প। কলা বিক্রি করে তাঁর ভাগ্য বদলে গেছে।

গত আট বছরে তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল, ডিক্রির চর ও ঈশান গোপালপুর ইউনিয়ন এবং পাশের গোয়ালন্দ এলাকার অন্তত ৪০০ বিঘা জমিতে কলার বাগান গড়ে তুলেছেন। এ কাজে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন আরও চার অংশীদার।

সামাদ কাজী (৪৫) ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা মান্নান কাজীর ছেলে। ২০১১ সালে বাড়ির পাশে ৪ বিঘা জমি ৫ বছরের জন্য ৪০ হাজার টাকায় ইজারা নিয়ে তিনি কলা চাষ করেন। ওই জমিতে দেশি জাতের ১ হাজার ২০০টি সবরি কলার চারা রোপণ করেন তিনি। নিজেই জমি তৈরি করা, চারা রোপণ, সার দেওয়া ও পরিচর্যা করেন। এক বছরে সব খরচপাতি বাদ দিয়ে তাঁর দুই লাখ টাকা লাভ হয়। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। চর এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় তিনি ৪০০ বিঘা জমিতে কলা চাষ করছেন। পরে তাঁর সঙ্গে চারজন অংশীদার যুক্ত হয়েছেন।

সামাদ কাজী দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাঁরা পাঁচ ভাই–বোন ছিলেন। অভাবের কারণে তিনি পড়ালেখা করতে পারেননি। সামাদ কাজীর ভাষায়, ‘আমি অত্যন্ত ঠেকা (দরিদ্র) মানুষ ছিলাম। লেখাপড়া করিনি। কোনো জমিজিরাত ছিল না। মানুষের জমিতে কৃষাণ দিয়া সংসার চালাইতাম। একসময় আমার মনে হইল, এভাবে দিন কাটে না। কাটতে পারে না। তাই কলা চাষের দিকে মন দিই।’

তবে সামাদ কাজী ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা শিখিয়েছেন। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। তাঁর স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, তিনি নিজে পড়াশোনা করেননি, তবে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে সব সময়ই আন্তরিক। তিনি সব সন্তানকে পড়াশোনা করাচ্ছেন।

কলা বিক্রি করে সামাদ কাজী দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ৩৭ শতাংশ জমি কিনে একটি সেমিপাকা ঘর তুলেছেন। কলা চাষ লাভজনক হওয়ায় তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এলাকার আরও চারজন। ব্যাপারীরা এসে বাগান ধরে কলা কিনে নিয়ে যান। সামাদ বলেন, ‘আমার বাগানের কলা খুব সুস্বাদু। গাছে কোনো রাসায়নিক সার দিই না। জৈব সার ব্যবহার করি। এর ফলে কলার মূল স্বাদ অপরিবর্তিত থাকে।’

তাঁদের বাগান থেকে কলা সংগ্রহ করে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন আরিফ বাজার এলাকার তারা শেখ নামের এক ব্যাপারী। তারা শেখ বলেন, দেশি জাতের কলা চাষ করেন সামাদ। তাঁর কলার স্বাদ ভালো। বাজারে চাহিদাও বেশি। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এই কলা নিয়ে গেলে বিক্রি করতে একটুও বেগ পেতে হয় না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলার ৮৬০ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়। কলা উৎপাদিত হয়েছে ২১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, সামাদ কাজী সফল কলাচাষি। এলাকায় কলা চাষের ব্যাপারে তাঁর সুনাম রয়েছে।