বিমান পাঁচ তারকা, নভোএয়ার তিন তারকা

>
  •  নিরাপদ এয়ারলাইনসের তালিকা করে এয়ারলাইন রেটিংস ডটকম
  •  বিশ্বের ৪০৫টি বিমান সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তালিকা হয়
  •  তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে ১২টি পৃথক মানদণ্ড ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি
  •  উড্ডয়ন নিরাপত্তার সূচকের সর্বোচ্চ মান সাত তারকা
  • এবারই প্রথম পাঁচ তারকা পেল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস
  • নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করায় নভোএয়ার তিন তারকা পেয়েছে

উড্ডয়ন নিরাপত্তার সূচকে ‘পাঁচ তারকা’ পেয়ে বিশ্বের নিরাপদ এয়ারলাইনসের তালিকায় স্থান করে নিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। দেশের বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা নভোএয়ারও এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। তবে তারা পেয়েছে ‘তিন তারকা’।

উড্ডয়ন নিরাপত্তা মান নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এয়ারলাইন রেটিংস ডটকমের ওয়েবসাইট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্বের ৪০৫টি বিমান সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রতিবছর নিরাপদ এয়ারলাইনসের তালিকা তৈরি করে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এয়ারলাইন রেটিংস ডটকম। এ ক্ষেত্রে ১২টি পৃথক মানদণ্ড ব্যবহার করে তারা। এর মধ্যে বিমান পরিবহনসংক্রান্ত দেশি-বিদেশি সংস্থা এবং এ খাতের শীর্ষ সংগঠনগুলোর নিরীক্ষা প্রতিবেদন উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বিমান সংস্থাগুলোর দুর্ঘটনায় পড়ার হার এবং বহরে থাকা উড়োজাহাজের বয়সসহ অন্যান্য বিষয়ও পর্যালোচনা করা হয়।

উড্ডয়ন নিরাপত্তার সূচকের সর্বোচ্চ মান ‘সাত তারকা’। এবারই প্রথম ‘পাঁচ তারকা’ পেল বিমান।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ বলছে, উড্ডয়ন নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে তাদের বেশ কিছু অগ্রগতি আছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার নিরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছে বিমান। এর মধ্যে ২০০৮ সাল থেকে টানা ছয়বার ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইয়াটা) ‘অপারেশনাল সেফটি অডিট’ উত্তীর্ণ হয়েছে বিমান, যা এখন পর্যন্ত বহাল আছে। দুই বছর পরপর এই নিরীক্ষা হয়।

সারা বিশ্বের বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইকাওর (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন) নির্দেশনা অনুযায়ী সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বিমান বাস্তবায়ন করেছে। কার্গো (পণ্য পাঠানোর) নিরাপত্তা মান উন্নয়নের জন্য ইউরোপিয়ান অ্যাভিয়েশন সেফটি এজেন্সির (ইয়েসা) নির্দেশিত নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ পেয়েছে। এটা চালু রাখতে প্রতি তিন মাস অন্তর নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া নিয়মিত উড্ডয়নের তথ্য বিশ্লেষণ করে আকাশপথের ঝুঁকিগুলো সমাধানে ব্যবস্থা, পাইলটদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য দেশের বিমান সংস্থাগুলোকে কী কী ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়, সেসব তথ্য সংগ্রহের জন্য আইয়াটার সঙ্গে তথ্য বিনিময়ের চুক্তি করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হালনাগাদ হচ্ছে। ‘কেবিন ক্রু মোবাইল অ্যাপ’ চালু করা হয়েছে, যাতে নিরাপত্তাসংক্রান্ত কিছু কেবিন ক্রুদের নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে ছবি তুলে তা অ্যাপে পাঠিয়ে দিতে পারেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

এসব পদক্ষেপ গত দুই-তিন বছরে বিমানের উড্ডয়ন নিরাপত্তার মান অনেক বাড়িয়েছে বলে জানান বিমানের মুখপাত্র ও মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ বিমান যাত্রী নিরাপত্তা ও আকাশপথে উড্ডয়ন নিরাপত্তাকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেয়। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পাঁচ তারকা অর্জন দেশের জন্য গৌরবের।

শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি। এখন ৬টি অভ্যন্তরীণ ও ১৪টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। এর বহরে আছে ড্রিমলাইনারসহ নতুন প্রজন্মের ১৩টি উড়োজাহাজ। আরও ২টি ড্রিমলাইনার চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্ত হবে। বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৪৭ বছরে প্রায় পৌনে ছয় কোটি যাত্রী পরিবহন করেছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে ২৬ লাখ যাত্রী বিমানে ভ্রমণ করেছেন।

নভোএয়ার
দেশের একমাত্র বেসরকারি বিমান সংস্থা হিসেবে বিশ্বের নিরাপদ এয়ারলাইনসের তালিকায় স্থান পেয়েছে নভোএয়ার। এয়ারলাইন রেটিং ডটকমের তথ্য অনুসারে, যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করায় নভোএয়ার তিন তারকা মান পেয়েছে।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নভোএয়ার যাত্রার শুরু থেকেই যাত্রী নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। সময়ানুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা ও সেবার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করে এরই মধ্যে নভোএয়ার নিরাপদ ভ্রমণে যাত্রীদের কাছে বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে।

নভোএয়ার এটিআর ৭২-৫০০ মডেলের ছয়টি নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সিলেট, সৈয়দপুর, বরিশাল, রাজশাহী ও কলকাতা গন্তব্যে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা করছে।