এক বছরে আত্মহত্যা করেছে ২৯৮ শিশু

চলতি মাসে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের এক বস্তিতে শিশু আয়েশাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
চলতি মাসে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের এক বস্তিতে শিশু আয়েশাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

দেশে কিশোর-কিশোরী ও শিশুদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। ২০১৮ সালে ২৯৮টি শিশু আত্মহত্যা করেছে। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ২১৩। শিশুদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘শিশু অধিকার পরিস্থিতি ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম (বিএসএএফ)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুদের আত্মহত্যার কারণগুলো হলো পারিবারিক কলহ, অভিমান, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, বাল্যবিবাহ, যৌন নির্যাতন-নিপীড়নের ও পর্নোগ্রাফির শিকার হওয়া, প্রেম-ভালোবাসায় ব্যর্থ বা প্রত্যাখ্যাত হওয়া এবং শৌখিন জিনিস কিনে না দেওয়া।

শিশু ধর্ষণের পরিস্থিতি তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭১ শিশু। এর মধ্যে ৯৪টি শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছে, ২৮টি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ৬০টি শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ধর্ষণের পর অপমান সইতে না পেরে ৬টি শিশু আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়া একই বছরে ৪৩টি শিশু ইভটিজিং ও ৮৭টি শিশু যৌন নিপীড়ন–হয়রানির শিকার হয়েছে।

বিএসএএফ প্রতিবছর গণমাধ্যমে ছাপা হওয়া খবরের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এবারের প্রতিবেদনটি ১৫টি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হওয়া শিশু নির্যাতনের খবরের তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

দেশে সামগ্রিকভাবে শিশুহত্যা বেড়েছে উল্লেখ করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে হত্যার শিকার হয়েছে ৪১৮টি শিশু, যা ২০১৭ সালে ছিল ৩৩৯টি। অর্থাৎ শিশুহত্যা বেড়েছে ২৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। হত্যার শিকার ৪১৮টি শিশুর মধ্যে ৮১টি শিশু নিখোঁজ হওয়ার পর নিহত অবস্থায় পাওয়া গেছে, ৫৩টি শিশু বাবা-মায়ের হাতে খুন হয়েছে, ৩১টি শিশুকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে এবং ৬টি শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৬২৭ শিশু এবং পানিতে ডুবে মারা গেছে ৬০৬টি শিশু।

অনুষ্ঠানে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘শিশু অধিকার রক্ষায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। শিশুর অধিকার রক্ষায় কাজ করতে হবে এবং বলতে হবে।’ শিশুদের অধিকার রক্ষায় একটি অধিদপ্তর গঠন করার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

শিশু পরিস্থিতির এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিএসএএফের পরিচালক আবদুস শহীদ মাহমুদ। তিনি বলেন, শিশুদের প্রতি সহিংসতায় বিচারহীনতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা অব্যাহত আছে। সমাজে শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইন করে তা করা সম্ভব নয়। আবার একা সরকারের পক্ষেও তা সম্ভব নয়। সরকারসহ প্রত্যেকের জায়গা থেকেই ভূমিকা রাখা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএএফের চেয়ারপারসন খাজা শামসুল হুদা।

শিশুদের নিয়ে কাজ করে—এমন ২৬৯টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার ও গঠনের একটি নেটওয়ার্ক বিএসএএফ। ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছর এই ফোরাম গণমাধ্যমে প্রকাশিত শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে।