অর্থ আত্মসাৎ: সোনালী ব্যাংকের আট কর্মকর্তার কারাদণ্ড

অর্থ আত্মসাতের দায়ে গোপালগঞ্জ সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার আট কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফরিদপুর জেলা জজ আদালত চত্বর, ২৩ জানুয়ারি। ছবি: আলীমুজ্জামান
অর্থ আত্মসাতের দায়ে গোপালগঞ্জ সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার আট কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফরিদপুর জেলা জজ আদালত চত্বর, ২৩ জানুয়ারি। ছবি: আলীমুজ্জামান

অর্থ আত্মসাতের দায়ে গোপালগঞ্জ সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার আট কর্মকর্তাকে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মতিয়ার রহমান এ আদেশ দেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে একজন প্রধান ক্যাশিয়ার ও বাকি সাতজন ক্যাশিয়ার। তাঁরা হলেন প্রধান ক্যাশিয়ার শওকত হোসেন মোল্লা, ক্যাশিয়ার অমল চন্দ্র বিশ্বাস, এইচ এম সিদ্দিকুর রহমান, মঞ্জুরুল হক, মোশারফ হোসেন মোল্লা, গোলাম মো. মুন্সি, দিলীপ কুমার মণ্ডল ও ইউসুফ আলী খন্দকার। মামলা দায়েরের পর শুধু মোশারফ হোসেন মোল্লা ছাড়া সবাই বরখাস্ত হন। মামলাটির তদন্তে ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ফরিদপুর জেলা দুদকের পিপি মজিবর রহমান জানান, দণ্ডিত আসামিদের অপরাধ, তাঁরা সোনালী ব্যাংক গোপালগঞ্জ শাখার পেনশন হোল্ডার ও ভুয়া পেনশন হোল্ডারদের নাম দেখিয়ে ৪৭ লাখ ২ হাজার ৬২৮ টাকা ৩৮ পয়সা টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন। ২০০৩ সালের ৮ ডিসেম্বর ওই ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপক আবদুস সোবাহান মামলাটি করেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, মোট আসামি ছিলেন ১০ জন। এর মধ্যে তদন্ত চলাকালে দুজনের মৃত্যু হয়।

পিপি মজিবর রহমান বলেন, আদালত শওকত হোসেন মোল্লাকে ব্যাংকে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি টাকা আত্মসাতের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৪৭ লাখ ২ হাজার ৬২৮ টাকা ৩৮ পয়সা জরিমানা করেছেন। জরিমানা অনাদায়ে তাঁকে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। পাশাপাশি জাল ও জালিয়াতির দায়ে তাঁকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগের শাস্তি দেওয়া হয়।

মজিবর রহমান জানান, অপর সাত আসামিকে ১৮ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৯০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন। জরিমানা অনাদায়ে তাঁদের আরও ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

রায় ঘোষণার সময় প্রধান আসামি শওকত হোসেন ছাড়া অন্য সাতজন আদালতে হাজির ছিলেন। শওকত হোসেন গ্রেপ্তার হলেও মামলা চলাকালীন জামিন নিয়ে পালিয়ে যান। রায় ঘোষণার পরে উপস্থিত এই সাতজনকে ফরিদপুর জেলা কারাগারে নেওয়া হয়।

আদালতের নথি ঘেঁটে জানা গেছে, ওই আসামিরা যোগসাজশে পেনশন হোল্ডার ও ভুয়া পেনশন হোল্ডারদের নাম দেখিয়ে ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০০৩ সালে মামলা হওয়ার পর এর তদন্তভার পড়ে দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আবুল বাশারের ওপর। তদন্তকালে দুই আসামি পরিমল বিশ্বাস ও খবির উদ্দিনের মৃত্যু হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আনিসুল হাসান বলেন, ‘আদালতে আমরা সুবিচার পাইনি। উচ্চ আদালতে আপিল করব। আমাদের প্রত্যাশা, উচ্চ আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাব।’