হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

>
  • মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের হিসাবরক্ষক ফুয়াদ
  • ফুয়াদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
  • অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি
  • ফুয়াদের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে কমিটি
  • ৬৯ লাখ টাকার বেশি তছরুপ করেছেন

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের হিসাবরক্ষকের পাশাপাশি ক্যাশিয়ার পদে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ মো. মাহমুদ ফুয়াদ। তাঁর বিরুদ্ধে হাসপাতালের বিভিন্ন খাতে ভুয়া বিল-বাউচারের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত কমিটিও করা হয়। তদন্ত কমিটি হাসপাতালের হিসাবরক্ষকের অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে। গত এক বছরে হাসপাতালটির তৃতীয় শ্রেণির ওই কর্মকর্তা ৬৯ লাখ টাকার বেশি অর্থ তছরুপ করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী সোবহান মিয়াসহ পাঁচজন কর্মচারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (প্রশাসন) লিখিতভাবে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) বি এম মুজহারুল ইসলাম মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিনহাজ উদ্দিনকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন। ৫ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান মিনহাজ উদ্দিন। এতে হিসাবরক্ষক ফুয়াদের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম এবং এই অনিয়মের পেছনে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুর রহমানের ইন্ধন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

তদন্ত প্রতিবেদন এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত অর্থবছরে ১০টি স্থানীয় কোটেশনের বিলের মাধ্যমে হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার নামে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে হিসাবরক্ষক মাহমুদ ফুয়াদ ৪২ লাখ ৬ হাজার ৫০ টাকা উত্তোলন করেন। তবে কোনো মালামালের বিবরণ ও মূল্যতালিকা নথিভুক্ত করা হয়নি। গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালের আয়ের (ইউজার ফি) ২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেননি মাহমুদ।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন বাবদ মাহমুদ ফুয়াদ ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। অথচ ওয়ার্ড মাস্টার মো. শাহজাহান মিয়া পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মজুরি বাবদ তাঁর কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন মাত্র ৪ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ এই খাতে তিনি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা তছরুপ করেন।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে মাহমুদ ফুয়াদ হাসপাতালের জেনারেটরের জ্বালানি খরচ বাবদ উত্তোলন করেছেন ৫ লাখ ২১ হাজার ৬৬৪ টাকা। অথচ জ্বালানি খাতে ব্যয় হয় ৬৩ হাজার ৪৭২ টাকা। জ্বালানি ক্রয়ের নামে তিনি ৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৯১ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তিন বছর পরপর অবসর ও বিনোদন ভাতা পাওয়ার বিধান থাকলেও তা ভঙ্গ করে মাহমুদ ফুয়াদ এক বছরে দুবার এই ভাতা হিসেবে ৩৩ হাজার ৬৯৮ টাকা উত্তোলন করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি সাতজন স্বাস্থ্য সহকারীর বকেয়া বেতনের ৩৩ হাজার ৬৯০ টাকা উত্তোলন করেন। তবে সেই অর্থ স্বাস্থ্য সহকারীদের দেওয়া হয়নি। ওই কর্মকর্তা হাসপাতালের সরকারি বাসায় থাকলেও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাসাভাড়া সরকারি কোষাগারে জমা করেননি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, হিসাবরক্ষক কোনো আর্থিক দুর্নীতি কিংবা অনিয়ম করে থাকলে কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তবে এসব ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

হিসাবরক্ষক মাহমুদ ফুয়াদও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

আরএমও লুৎফর রহমান বলেন, তাঁর স্বাক্ষর জাল করে সরকারি টাকা আত্মসাতের অপরাধে হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছেন। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্ত হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।