ঢাকায় অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা

>
তেজগাঁও রেলগেট–সংলগ্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়টি এখনো সরানো হয়নি।  ছবি: প্রথম আলো
তেজগাঁও রেলগেট–সংলগ্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয়টি এখনো সরানো হয়নি। ছবি: প্রথম আলো

*ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনের অস্থায়ী দলীয় কার্যালয় সরেনি
*বেশির ভাগ অস্থায়ী দলীয় কার্যালয় বাঁশ ও ত্রিপলের ছাদের তৈরি
*কিছু কার্যালয়ে তালা, বাকিগুলোতে বসে কর্মী-সমর্থকদের আড্ডা
*অস্থায়ী কার্যালয় স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাসখানেক পেরোলেও নগরের বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় চোখে পড়ে। সেসব কার্যালয়ের চারপাশে নির্বাচনকালীন পোস্টার, ব্যানার ও দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নৌকা দেখা গেছে। অস্থায়ী এসব কার্যালয় স্থায়ী হওয়ার পথে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের।

গত কয়েক দিনে নগরে ঘুরে উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে, উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের জসীমউদদীন সড়কে, বাড্ডার ডিআইটি প্রকল্পের ৩ নম্বর সড়কে, নাখালপাড়া এলাকার লুকাস মোড়ে, নাখালপাড়াসংলগ্ন রেললাইনের পাশে, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের একাধিক দলীয় কার্যালয়ের সামনে, পূর্ব তেজতুরী বাজার এলাকায় অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় দেখা গেছে। মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের কারওয়ান বাজারসংলগ্ন নিচে অস্থায়ী কার্যালয়গুলো দেখা যায়। বেশির ভাগ কার্যালয় বাঁশ ও ত্রিপলের ছাদের তৈরি। কয়েকটি টিন দিয়ে তৈরি। কিছু কার্যালয়ের বাইরে তালা দেওয়া। বাকিগুলোতে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সমর্থক-কর্মীরা বসে আড্ডা দেন, টিভি দেখেন।

নির্বাচনের পর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারের ব্যানার ও পোস্টার সরিয়েছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। তবে এসব অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে টাঙানো ব্যানার ও পোস্টারগুলো আগের মতোই আছে।

গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতেই নির্বাচনের অস্থায়ী প্রচার কার্যালয়গুলো তৈরি করা হয়। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরির নিয়ম থাকলেও তা মানেননি রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে একই ওয়ার্ডে একাধিক প্রচার কার্যালয় তৈরি করা হয়।

উত্তরার ১ নম্বর সেক্টরের জসীমউদদীন সড়কে পাকার মাথা এলাকায় নির্বাচনী কার্যালয় করা হয়েছিল শ্রমিক লীগ উত্তরা পশ্চিম থানার পক্ষ থেকে। টিন দিয়ে বানানো এই কার্যালয় নির্বাচনের পর আর সরানো হয়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, কার্যালয়টি দিনের বেলায় তালাবদ্ধ থাকে। সন্ধ্যার পর নেতা-কর্মীরা আড্ডা জমান। আজমপুরের কার্যালয়টিও টিনের তৈরি। সেখানে এখনো ঝুলছে ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহারা খাতুনের নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যানার। সেগুলো অপসারণের কোনো পদক্ষেপ নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, তেজগাঁওয়ে ১ নম্বর রেলগেটসংলগ্ন অস্থায়ী কার্যালয়টি চারপাশে কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। এর বাইরে ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কার্যালয়টি বানানো হয়েছিল। কার্যালয়ের বাইরে আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা উড়ছে। নির্বাচনের একাধিক ব্যানার টাঙানো আছে। এর কিছু দূর উত্তর-পূর্বে আরেকটিতে কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়। তবে এর ভেতরে কোনো মানুষ বা চেয়ার-টেবিলও দেখা যায়নি।

আশপাশের দোকানিদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা অস্থায়ী দলীয় কার্যালয় নিয়ে কিছু বলতে চাননি। রাতের বেলায় এই এলাকা মাদকসেবীদের আড্ডায় পরিণত হয় বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। এখানে মাসখানেক আগে কারওয়ান বাজারসংলগ্ন রেললাইনঘেঁষা বস্তি ও দোকানগুলো ভেঙে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জায়গার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহু বছর ধরে রেললাইনসংলগ্ন এলাকায় দলের এই কার্যালয় আছে। আমরা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত লোকজনের অনুমতি নিয়ে অস্থায়ী কার্যালয়টি তৈরি করেছি। শীতকাল বলে সেখানে ওপরে ত্রিপলের ছাউনি ও চারপাশে কাপড় দেওয়া হয়েছে। আর নির্বাচনী ব্যানারগুলোও সব দলের কার্যালয়ের সামনেই আছে।’

ডিএনসিসির ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শামীম হাসানের সঙ্গে কথা বললে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনকালীন অস্থায়ী কার্যালয়গুলো আইনগতভাবে থাকা ঠিক নয়। যুবলীগ বা কোনো দলের কার্যালয় থাকলে তাদের সেগুলো সরিয়ে ফেলা উচিত। তবে বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী কার্যালয়ের বাইরেও কিছু দলীয় কার্যালয় আগে থেকেই আছে। সেখানে নির্বাচনকালীন কার্যালয় তৈরি করা হয়।

কাউন্সিলর শামীম হাসান জানান, আজ বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে। সে সময় রাস্তায় ও ফুটপাতে থাকা দলীয় কার্যালয়সহ যেকোনো অবৈধ স্থাপনা তুলে দেওয়া হবে।