'আমাকে আসামির কাঠগড়ায় বসান'

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
>

• গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে
• বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালত-৩–এ বিচার
• গতকাল শুনানির শুরুতেই খালেদার বসা নিয়ে বিতণ্ডা
• বিচারকের আশ্বাসে উভয় পক্ষ শান্ত হয়
• গতকাল অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়নি

গ্যাটকো দুর্নীতির মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানিতে আদালত কক্ষে খালেদা জিয়ার বসার জায়গা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক হয়েছে।

বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসার মাঠের পাশে স্থাপিত আদালত কক্ষে এর আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বসানো হতো আইনজীবীদের সামনের খোলা জায়গায়। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে সেখানে না বসিয়ে এজলাসেরবাঁ পাশের দেয়াল ঘেরা একটি জায়গায় বসানো হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানির শুরুতেই এর প্রতিবাদ জানান।

নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে চলছে। তবে গ্যাটকো মামলার কার্যক্রম চলছে বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত–৩ এর অস্থায়ী এজলাসে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে জেলে (পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার) যাওয়ার পর গতকালই প্রথম খালেদা জিয়াকে হুইল চেয়ারে করে এই আদালতে আনা হয়। পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালতের দূরত্ব প্রায় ৩৫০ গজ। এই আদালতের বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন।

গতকাল শুনানির শুরুতে আদালতের উদ্দেশে আইনজীবীরা বলেন, এভাবে একজন আসামিকে (খালেদা জিয়া) বিচ্ছিন্ন করে রেখে শুনানি করা যায় না। শুনানি করতে হলে খালেদা জিয়াকে আগের স্থানে এনে বসাতে হবে। এ সময় খালেদা জিয়া বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আপনাকে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। আগে তো সব সময় সামনেই বসেছি। আজ সমস্যা কী?’

এ সময় বিচারক আসামিপক্ষের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার আদালতে তো এর আগে কখনো বেগম জিয়া আসেননি। তাই ওনার বসার ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার জানা ছিল না। আজ উনি ওখানেই বসুন। আগামী তারিখে আমি বিষয়টি দেখব।’ এই পর্যায়ে আদালতের নির্দেশে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এই আদালতের গঠন ও ব্যবস্থাপনা তো এ রকমই। তবে এ বিষয়ে মাননীয় আদালত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

কিন্তু আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তা মানছিলেন না। তাঁরা তখনই খালেদা জিয়ার বসার স্থানের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলেন। না হলে শুনানিতে অংশ নিয়ে তাঁরা আদালতকে সহযোগিতা করবেন কি না, তাও ভেবে দেখবেন বলে আদালতে বলেন। একপর্যায়ে আদালতের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তাহলে আমাকে আসামির কাঠগড়ায় বসান।’

শেষ পর্যন্ত আসামিপক্ষ বিচারকের আশ্বাস মেনে নিয়ে বলেন, অপমান করার জন্য বেগম জিয়াকে ওই স্থানে বসানো হয়েছে। কিন্তু কী আর করা। যে দেশে যা চল সেভাবেই তো চলতে হবে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসামিপক্ষের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। আবারও কিছুক্ষণ বিতণ্ডা চলে। এরপর আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হতে পারেনি।

শুনানির শুরুতেই খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, মামলার অভিযোগপত্রে যেসব তথ্যপ্রমাণপত্র জব্দ করে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিপক্ষ সেগুলো পায়নি। সেগুলো না পেলে অভিযোগ গঠনের শুনানি করা সম্ভব নয়। একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে আসামিপক্ষ সব কাগজপত্র পেতে পারে না।

একপর্যায়ে আদালত জানতে চান, প্রমাণপত্রগুলো পাওয়ার জন্য আসামিপক্ষ আবেদন করেছিল কি না। জবাবে আইনজীবী বলেন, মৌখিকভাবে চাওয়া হয়েছিল। আদালত সেগুলো লিখিতভাবে চাইতে বলেন। এরপর অনুপস্থিত দুই আসামি সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও ইসমাইল হোসেন সায়মনের সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করার আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। ওই দিন অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হতে পারে।

২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া, তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানসহ ২০০১-০৬ সালের মন্ত্রিসভার আটজন সদস্য এবং আরও ১৬ জন বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই মামলা হয়।