আমি শুধু বল দেখি আর মারি

এবি ডি ভিলিয়ার্স: ‘৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান’! ফাইল ছবি
এবি ডি ভিলিয়ার্স: ‘৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান’! ফাইল ছবি
>উইকেটের চারদিকেই ঘোরে তাঁর ব্যাট। ‘৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটসম্যান’ পরিচয়টা তাই লেগে গেছে নামের সঙ্গে। কাল ছুটির দিনে চট্টগ্রাম ক্লাবে টেনিস খেলতে এসে রংপুর রাইডার্সের দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্স কথা বললেন অনেক কিছু নিয়েই—

প্রশ্ন: বিপিএল কেমন উপভোগ করছেন?
এবি ডি ভিলিয়ার্স: খুবই ভালো লাগছে। চমৎকার একটা দলে ভালো কিছু বন্ধু পেয়েছি। ম্যাচও জিতলাম টানা তিনটি। সব মিলিয়ে দলটা দারুণ ছন্দে আছে। মাঠে অনেক দর্শক হচ্ছে দেখলাম। মানুষের খেলাটার প্রতি ভীষণ আগ্রহও আছে এখানে। সব মিলিয়ে খুবই উপভোগ করছি টুর্নামেন্টটা।
প্রশ্ন: অন্যান্য দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও খেলেছেন। সেগুলোর সঙ্গে বিপিএলকে কীভাবে তুলনা করবেন?
ডি ভিলিয়ার্স: আইপিএলের মতো অত ভালো নয়। খুব বেশি দিন তো হয়নি টুর্নামেন্টটি শুরু হয়েছে। আইপিএল ১১ বছর ধরে হচ্ছে, বিপিএলের এটি ষষ্ঠ মৌসুম। কাজেই এটির বয়স এখনো খুব বেশি নয়। তবে বিশ্বের অন্যান্য বড় টুর্নামেন্টের সঙ্গে বিপিএলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতেই পারে। আমারও ইচ্ছা, আবারও এখানে আসব।
প্রশ্ন: যে উইকেটে খেলা হচ্ছে, টি-টোয়েন্টির জন্য ঠিক মনে হয়? চট্টগ্রামে ব্যাটসম্যানরা ভালো রান পেলেও টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে রানের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে...
ডি ভিলিয়ার্স: দেখুন, একেক উইকেট একেক রকম, এটাই স্বাভাবিক। আপনি ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারছেন, সেটাও কিন্তু আপনার দক্ষতার অংশ। আমি ক্রিস গেইলকে যেমন ১ (২) রানে আউট হয়ে যেতে দেখেছি, আবার এখানেই ২৩০ রানের ইনিংসও দেখেছি। এটাই ক্রিকেটের সৌন্দর্য।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? ২০ ওভারের ক্রিকেটের আদর্শ ব্যাটিংটা কি দেখতে পান তাঁদের ব্যাটে?
ডি ভিলিয়ার্স: নিশ্চিত করে বলতে পারব না, কারণ খুব কাছ থেকে তাদের বেশি সময় দেখা হয়নি। তবে দলটিতে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকরা অনেক দিন ধরেই খেলছে। তারা এখন দলকে জেতাতে পারছে। আসলে সবচেয়ে বড় কথা, মাঠের মাঝখানে গিয়ে আপনি পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারছেন কি না। বাংলাদেশ আস্তে আস্তে ভালো দল হয়ে উঠছে এবং আমার বিশ্বাস বিশ্বকাপে তারা ভালো করবে।
প্রশ্ন: আপনার কথা বলুন। খুব ভালো অবস্থায় থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন। কতটা কঠিন ছিল এই সিদ্ধান্ত নেওয়া?
ডি ভিলিয়ার্স: মোটেই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল না। কারণ আমি শুধু আমার মনের কথাই শুনেছি। আমার মনে হয়েছে, পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানো উচিত। ১২ মাস ক্রিকেট খেলার পরিবর্তে আমি এখন বছরে পাঁচ-ছয় মাস ক্রিকেট খেলব। অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তটি আমার জন্য যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি পরিবারের জন্যও ভালো হয়েছে। তারা এখন আমাকে আরও বেশি সময় পাচ্ছে।
প্রশ্ন: সব দিকেই মারতে পারেন বলে ‘৩৬০ ডিগ্রি’ ব্যাটসম্যান বলা হয় আপনাকে। একটু কি বলবেন, এ রকম একজন ব্যাটসম্যান হতে আপনাকে বিশেষ কী কী করতে হয়েছে?
ডি ভিলিয়ার্স: দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আমি প্রক্রিয়াটা বর্ণনা করতে পারব না। আমি চেয়েছি সব সময় মৌলিক জিনিসগুলো ঠিক রাখতে। আমার কাছে ব্যাপারটা খুব সাধারণ, আমি শুধু বল দেখি আর মারি। এ নিয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করি না। আমি শুধু চেষ্টা করি পৃথিবীর যেখানেই খেলি, ম্যাচ জিততে।
প্রশ্ন: এত যে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করেন, সে জন্য তাহলে আলাদা কিছুই করতে হয়নি...
ডি ভিলিয়ার্স: অবশ্যই না। রানের ক্ষুধা, সেরা হওয়ার ইচ্ছা এবং ম্যাচ জয়ের তাড়না থেকেই আসলে এটা হয়ে যায়। যেকোনো খেলার কথাই বলি, আপনি যদি সত্যিই সেরা হতে চান, তাহলে নিশ্চয়ই কোনো পথ খুঁজে পাবেন।
প্রশ্ন: দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন ছিল আপনার। এ নিয়ে কোনো আফসোস?
ডি ভিলিয়ার্স: না, একদমই নেই। কারণ এটাও খেলার অংশ। কিছু ম্যাচ আপনি জিতবেন, কিছু হারবেন। কাল (পরশু) আমরা জিতেছি, কাল (আজ) হারতেও পারি। এটাই ক্রিকেট। বিশ্বকাপ জিতে খেলা ছাড়তে পারলে অবশ্যই খুব ভালো লাগত। তবে একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় বা একজন মানুষ হিসেবে আমি কেমন, সেই মূল্যায়ন মানুষ শুধু এটা দিয়েই করবে না। আমি সারা বিশ্বেই খেলেছি এবং অনেক রান করেছি। আমার চমৎকার একটা ক্যারিয়ার আছে, যেটার প্রতিটি মুহূর্ত আমি উপভোগ করেছি। আমার অনেক ভালো বন্ধু আছে। কাজেই কোনো কিছু না পাওয়ার আফসোসটা কখনো করি না।
প্রশ্ন: টেস্ট-ওয়ানডে দুটিতেই ১০ হাজার রানের মালিক হতে পারতেন। দুটিরই বেশ কাছাকাছি গিয়ে হঠাৎ খেলা ছেড়ে দিলেন। রেকর্ডের কি তাহলে কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে?
ডি ভিলিয়ার্স: রেকর্ড নিয়ে আমি ভাবি না। আগেও কখনো ভাবিনি। ভবিষ্যতেও ভাবব না। আমি শুধু চাই আমার দলের হয়ে ম্যাচ জিততে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ নিয়ে আপনার হয়তো ব্যক্তিগত হতাশা নেই। কিন্তু কখনো বিশ্বকাপ জিততে না পারাটা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটেরই একটা দুঃখ হয়ে আছে। তো ২০১৯ বিশ্বকাপে কতটা সম্ভাবনা দেখছেন তাঁদের?
ডি ভিলিয়ার্স: দলটা বেশ ভালো। আসলে বিশ্বকাপে সবাই ভালো দল। সবারই সুযোগ থাকবে ট্রফি জেতার। আর আমিও কৌতূহল নিয়ে দেখব টুর্নামেন্টটা। কিছুদিন ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা ভালো ক্রিকেট খেলছে। দলে দারুণ একটা ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। আমি তো অবশ্যই আশা করি দক্ষিণ আফ্রিকাই এবার বিশ্বকাপ জিতবে।
প্রশ্ন: আপনার মতো মারকাটারি ব্যাটসম্যান হতে চায়, এমন তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য কোনো পরামর্শ?
ডি ভিলিয়ার্স: মৌলিক কাজটা ঠিকভাবে করো।