'মোটা, খাটো, ফরসা, শ্যামলা মেয়েরা কেমন পোশাক পরবে?'

নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে ‘পোশাকের শিল্প উপাদান ও শিল্পনীতি’ অধ্যায়ে মোটা, খাটো, ফরসা, শ্যামলা মেয়েরা কেমন পোশাক পরবে তার বর্ণনা আছে। ছবি: সংগৃহীত
নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে ‘পোশাকের শিল্প উপাদান ও শিল্পনীতি’ অধ্যায়ে মোটা, খাটো, ফরসা, শ্যামলা মেয়েরা কেমন পোশাক পরবে তার বর্ণনা আছে। ছবি: সংগৃহীত

মানুষের কিছু সুন্দর দিক হলো, সুন্দর কোমর, দৈহিক উচ্চতা, সুন্দর স্বাস্থ্য। আর মানুষের কিছু ত্রুটি থাকে। তা হচ্ছে স্ফীত হিপ, প্রশস্ত কাঁধ, খাটো গ্রীবা। এ ছাড়া খুব কম লোকই নিখুঁতভাবে জন্মগ্রহণ করে। দেহের বিভিন্ন অংশের ত্রুটি সুপরিকল্পিত পোশাকের আকৃতির মাধ্যমে গোপন করে সুন্দর দিকগুলো প্রস্ফুটিত করে ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করা যায়। পোশাক দেহের ত্রুটি গোপন করতে পারে।

নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে এভাবেই মানুষের দেহের ত্রুটি এবং সুপরিকল্পিত পোশাকের মাধ্যমে এই গোপন ত্রুটি দূর করার কৌশল শেখানো হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের বইটির ‘পোশাকের শিল্প উপাদান ও শিল্পনীতি’ অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, অনেকের পেছনের দিকে ঘাড়ের কাছে মাংস উঁচু হয়ে থাকে। ব্লাউজের গলার ছাঁটটিকে ওই মাংসপিণ্ডের ঠিক মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নিলে ঘাড়ের কাছের ত্রুটি এত প্রকট হবে না। অধ্যায়টিতে মোটা, খাটো, ফরসা, শ্যামলা বর্ণের মেয়ে বা নারীরা কোন পোশাক পরবেন, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যেমন: বেশি স্ফীত বুক ও প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমররেখার মাধ্যমে ঢাকা যায়।

শুধু তা–ই নয়, শ্যামলা বর্ণের মেয়েদের গায়ের রং উজ্জ্বল করার উপায়ও বাতলে দেওয়া হয়েছে ওই অধ্যায়ে। এতে বলা হয়েছে, ফরসা মেয়েকে যেকোনো রঙের পোশাকেই সুন্দর দেখাবে। গায়ের রং শ্যামলা হলে গাঢ় রং বর্জন করে হালকা রং নির্বাচন করতে হবে, যাতে তার গায়ের রং উজ্জ্বল দেখায়। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে প্রকাশ করতে না চায়, তাহলে শীতল বা হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করতে পারে, এতে করে শরীরের কোনো অংশই বেশি প্রাধান্য পায় না। এতে বলে দেওয়া হয়েছে, দেহের যে অংশ বেশি আকর্ষণীয়, সে অংশেই সাধারণত প্রাধান্য আনা হয়। প্রাধান্য সৃষ্টির জন্য গাঢ় বা বিপরীত রঙের বেল্ট, বোতাম, লেস ইত্যাদি বাছাই করা যেতে পারে।

আর যদি কেউ সঠিক পোশাক নির্বাচন করতে না পারে, তার পরিণতিও সৃজনশীল অংশে দেখানো হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে—সাবা ও সানা দুই বোন। উভয়ের গায়ের রং ফরসা হলেও দেহের গঠন ও আকৃতিতে দুজন একেবারেই বিপরীত। একদিন বিয়ের অনুষ্ঠানে দুজনই নীল রঙের শাড়ি পরে যায়। অনুষ্ঠানের সবাই পাতলা গড়নের সাবার প্রশংসা করলেও সানার প্রতি কেউ তেমন আগ্রহ দেখায়নি। শিক্ষার্থীদের সাবার প্রশংসিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে এবং সানার পরিধেয় পোশাক তার ব্যক্তিত্বের অন্তরায়, তা বিশ্লেষণ করতে হবে।

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইটির ‘পোশাকের যত্ন ও পারিপাট্যতা’ শীর্ষক (এখানে ‘পরিপাট্যতা’ শব্দে ব্যাকরণগত ভুল আছে। শব্দটি হবে ‘পরিপাট্য’) অষ্টাদশ অধ্যায়ের সৃজনশীল আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে—তানহা একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে যাবে। গায়েহলুদের ওই অনুষ্ঠানে তানহা সাদা রঙের সালোয়ার-কামিজ পরে সাজসজ্জা করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়। অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর তাকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তার মন খারাপ দেখে চাচি বললেন, পরিবেশের সঙ্গে মানানসই পোশাক ও সাজসজ্জা ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে। শিক্ষার্থীদের তানহাকে বিমর্ষ দেখানোর কারণ ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি চাচির মন্তব্যটির যথার্থতা মূল্যায়ন করতে হবে। মানানসই পোশাকের রং নির্বাচন করে দেহের ক্ষীণতা এবং স্থূলতা ঢাকার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি এ অধ্যায়েও শ্যামলা রঙের মেয়েদের দেহের বর্ণ কীভাবে উজ্জ্বল দেখানো যাবে, তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তবে পাঠ্যপুস্তকে এভাবে মোটা, খাটো, ফরসা, শ্যামলা বা ‘বডি শেমিং’-এর বিষয়টি প্রকট করে তুলে পোশাক নির্বাচন করা শেখানো কতটুকু যুক্তিসংগত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। ফ্যাশনের দৃষ্টিকোণ থেকেও বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য তাঁদের।

দেহের বিভিন্ন অংশের ত্রুটি সুপরিকল্পিত পোশাকের আকৃতির মাধ্যমে গোপন করে সুন্দর দিকগুলো প্রস্ফুটিত করে ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করার কথা বলা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
দেহের বিভিন্ন অংশের ত্রুটি সুপরিকল্পিত পোশাকের আকৃতির মাধ্যমে গোপন করে সুন্দর দিকগুলো প্রস্ফুটিত করে ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করার কথা বলা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

মোদ্দাকথায়, ফ্যাশন বলতে জনপ্রিয় যেকোনো শৈলী বা রীতিকে বোঝায়। ফ্যাশন মৌলিক ও পরিবর্তনশীল এবং একজন ব্যক্তি অভ্যাসগতভাবে যে শৈলীতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, সেটাই তার ফ্যাশন। পুরুষ ও নারীদের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পৃথক ফ্যাশনের চল দেখা যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে উভয়ের উপযোগী অভিন্ন ফ্যাশনের চলও আছে। তবে ফ্যাশনের সঙ্গে দেহের আকৃতি বা রঙের কোনো যোগসূত্র আসলে নেই।

আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শেষের কবিতা’য় ফ্যাশন বলতে বুঝিয়েছেন মুখোশকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, বডি শেমিংকে বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘কায়া কটূক্তি’। এই কায়া কটূক্তি করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য। আর এই শারীরিক অবয়বের বিষয়টিকে প্রধান করে পাঠ্যবইতে পড়ানো হলে তা হবে অমার্জনীয় অপরাধ। এতে শিক্ষার্থী শিখবে বর্ণবাদ এবং বর্ণবাদ নিয়েই বড় হবে সে। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন বা কর্তৃপক্ষ এই অপরাধের দায় এড়াতে পারে না।

এনসিটিবির অধীনে ২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইটি পড়ছে। বইটি পুনর্মুদ্রণ করা হয়েছে গত বছরের আগস্ট মাসে। বইটি রচনা করেছেন অধ্যাপক ইসমাত রুমিনা, সোনিয়া বেগম, গাজী হোসনে আরা, শামসুন নাহার বীথি, সৈয়দা সালিহা সালিহীন সুলতানা ও রেহানা ইয়াছমিন। বইটি সম্পাদনায় ছিলেন অধ্যাপক লায়লা আরজুমান্দ বানু এবং অধ্যাপক সৈয়দা নাসরীন বানু।

বইটির প্রসঙ্গ কথায় উল্লেখ করা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নির্বাচন ও উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ থেকে শুরু করে ইতিহাস ও ঐতিহ্য, চেতনাসহ ধর্ম–বর্ণ-গোত্র ও নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবার প্রতি সমমর্যাদাবোধ জাগ্রত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সময়ের চাহিদাকে সামনে রেখে সুচিন্তিতভাবে বইটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

এনসিটিবির ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের বইটিতে বলা হয়েছে, বেশি স্ফীত বুক এবং প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমর রেখার মাধ্যমে ঢাকা যায়। ছবি: সংগৃহীত
এনসিটিবির ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের বইটিতে বলা হয়েছে, বেশি স্ফীত বুক এবং প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমর রেখার মাধ্যমে ঢাকা যায়। ছবি: সংগৃহীত

বইটির দুটি অধ্যায়ে দেহের আকৃতি ও রং উল্লেখ করে পোশাক নির্বাচনের কথা এভাবে সঠিক হয়েছে কি না, জবাবে এনসিটিবির চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে বইটি পড়ানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত বই নিয়ে কোনো অবজারভেশন আসেনি। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যাডামরাই বইটি রচনা করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার পক্ষে সব বই দেখা সম্ভব না। আর যেহেতু অনেক যাচাই–বাছাই শেষে এনসিটিবির বই প্রণয়ন করা হয়, তাই এককভাবে কোনো মন্তব্য করাও ঠিক হবে না।’

তবে চেয়ারম্যান জানালেন, ২০১৯ সালে কারিকুলাম রিভিউ করে কারিকুলাম পরিমার্জন করা হবে। এ প্রক্রিয়াতেও শিক্ষাবিদেরাই অংশ নেবেন। এর আগে এনসিটিবির পক্ষে কোনো কিছু করা সম্ভব না।

বইটিতে আরও যা যা আছে

সরু কোমরের অধিকারীর শাড়ি ও ব্লাউজ বিপরীত রঙের হতে পারে, কিন্তু যাদের কোমর ভারী, তারা একই রঙের জামা পরতে পারে। মোটা মেয়েদের গাঢ় রঙের পোশাক পরলে আরও মোটা দেখাবে। তাই হালকা রঙের সালোয়ার-কামিজ-ওড়না, শাড়ি-ব্লাউজ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ নির্বাচন করতে পারে।

নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত
নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি: সংগৃহীত

আরও বলা হয়েছে, আঁটসাঁট পোশাক সুরুচি ও সূক্ষ্ম সৌন্দর্যানুভূতির পরিচয় দেয় না, বরং দেহের ত্রুটিগুলো আরও প্রকট করে তোলে। পরিচ্ছদ নির্বাচনের সময় খাটো, মোটা, লম্বা, পাতলা বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। মোটা ও খাটো মেয়েদের বড় বড় ছাপা শাড়ি পরিহার করতে বলা হয়েছে বইটিতে।

ব্লাউজ বা কামিজে ইয়ক, কুঁচি, বুকে তালি, পকেট, চওড়া কলার ব্যবহার করে দেহের ত্রুটি ঢাকা যায়। ডিম্বাকৃতির মুখমণ্ডলকে বইটিতে ‘আদর্শ’ বলে বলা হয়েছে। এ ধরনের মেয়েরা সব ধরনের গলার নকশাযুক্ত পোশাক বিনা দ্বিধায় নির্বাচন করতে পারে। জার্সি, শিফন ইত্যাদি কাপড়ের পোশাক শরীরের সঙ্গে সেঁটে থাকে, ফলে শরীরের দোষ বা গুণ সহজে বোঝা যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ডেনিম কাপড় শরীরের সঙ্গে সেঁটে থাকে না বলে শরীরের দোষ সহজে বোঝা যায় না।

বয়স্ক ও মোটা মেয়েদের পোশাক কী হবে?

বইটিতে বয়স্ক ও মোটা মানুষকে ফ্লানেল, ডেনিম প্রভৃতি নিষ্প্রভ জমিনের কাপড় বেছে নিতে বলা হয়েছে। বইটির ‘পোশাকের শিল্প উপাদান ও শিল্পনীতি’ অধ্যায়ে অনুশীলনীর বহুনির্বাচনী প্রশ্নে সার্টিন কাপড়ের জামা পরিধান করলে ভারী গড়নের মেয়েকে কেমন দেখাবে, তার উত্তর দিতে বলা হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নে গোলগাল চেহারার খাটো প্রকৃতির মেয়ে বন্যা মার্কেটে গিয়ে যে জামা দুটি খুব পছন্দ হয়েছিল, তা না কিনে কেন অন্য পোশাক কেনে, তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

শ্যামলা বর্ণের মেয়েদের গায়ের রং উজ্জ্বল করার উপায়ও বাতলে দেওয়া হয়েছে নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে। ছবি: সংগৃহীত
শ্যামলা বর্ণের মেয়েদের গায়ের রং উজ্জ্বল করার উপায়ও বাতলে দেওয়া হয়েছে নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ে। ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আবুল মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণভাবে বর্ণবাদ বা স্থূলতা নিয়ে কথা বলা যাবে না। কেউ মোটা বা শ্যামলা হলে তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। শারীরিক কারণে চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক স্থূলতার কথা বলতে পারেন। মানুষকে শারীরিক অবয়বের কারণে হেয় করা যাবে না—এটাই স্ট্যান্ডার্ড নীতি। আর কিছু জিনিস আছে, তা শিশুরা বাড়িতে শিখবে। শিশু একটু বড় হলে তাদের অন্তর্বাস পরতে হবে, তা তো পাঠ্যবইতে বলার দরকার নেই। সবকিছুকে পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিও উদ্ভট। আর স্ফীত হিপসহ অন্য বিষয়গুলোকে ‘ত্রুটি’ বলার অধিকারই–বা কে দিল?

আরও পড়ুন:-