চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে তরুণদের কাজে লাগাতে হবে

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন আবুল কাসেম খান। তাঁর ডানে মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ও এ কে এম ফাহিম মাশরুর। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন আবুল কাসেম খান। তাঁর ডানে মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ও এ কে এম ফাহিম মাশরুর। গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ সময়ে সারা বিশ্বের মতো দেশের তরুণদের কর্মসংস্থানে নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তবে আছে নানা চ্যালেঞ্জও। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে তরুণদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যুগোপযোগী পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় এই খাতে তরুণদের কর্মসংস্থান বাড়াবে।

গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে তারুণ্যের কর্মসংস্থান’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা এসব কথা বলেন। প্রথম আলোর আয়োজনে এই বৈঠকের সহযোগিতায় ছিল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) ও ইয়ুথ ফর পলিসি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে তিনটি শিল্পবিপ্লব পাল্টে দিয়েছে সারা বিশ্বের গতিপথ। তবে আগের তিনটি বিপ্লবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ডিজিটাল বিপ্লব। এটিকেই বলা হচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব।

বৈঠকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ মো. আজিজুর রহমান বলেন, সরকার শিক্ষা খাতে সংখ্যা বা পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি গুণগত মানের দিকে নজর দিচ্ছে। প্রযুক্তিভিত্তিক বিশ্বমানের পাঠ্যপুস্তক তৈরিতে সরকার কাজ করছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও পরিচালক আবুল কাসেম খান বলেন, দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু সাধারণ দক্ষতা (সফট স্কিল) তৈরি হচ্ছে না। বিশ্বায়নের এই যুগে এসে তরুণদের বিশ্ব নাগরিক হতে হবে। এর জন্য দরকার বিশ্বমানের শিক্ষাও।

বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর বলেন, তরুণদের মাথায় রাখা উচিত তাঁরা প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন, কিন্তু প্রযুক্তি যেন তরুণদের ব্যবহার না করে।

আইআইডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদ আহমেদ বলেন, প্রযুক্তি যেভাবে মানুষের জীবন বদলে দিচ্ছে, তা অনেকে তো ভাবতেও পারেনি। বেসরকারি খাত, শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক, নাগরিক সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি জানান, আইআইডির সাম্প্রতিক জরিপে ৮৪ শতাংশ তরুণের মতে, দক্ষতা আর বেকারত্ব তরুণদের প্রধান সমস্যা। প্রায় ২৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা তাঁদের চাকরি পেতে স্বল্প সাহায্য করে এবং ৮ শতাংশের মতে, শিক্ষা কোনো কাজেই আসে না বা চাকরি পেতে উল্টো বাধা সৃষ্টি করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মিনহাজুল আবেদীন বলেন, দেশের জাতীয় তথ্যভান্ডার হচ্ছে, আইটি পার্ক হচ্ছে, মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। এসব কাজে দেশের তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

শিক্ষার্থীদের ইয়ুথ ফর পলিসির স্বেচ্ছাসেবক মো. মেহেদী হাসান বলেন, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ে তরুণদের আগ্রহী করে তুলতে হবে। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের ফ্রিল্যান্সিং শেখাতে হবে।

ইয়ুথ ফল পলিসির স্বেচ্ছাসেবক অন্দ্রিলা নাজনীন বলেন, চাকরির আবেদন করতে গেলে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে সংগঠনে যুক্ত থাকা খুব কাজের।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মুখস্থনির্ভর মন্তব্য করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাজী রেজোয়ান হোসেন বলেন, এটাকে কর্মমুখী করা দরকার।

বগুড়া আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মোছা. যারিন তাছনিম বলেন, দেশে শিক্ষার হার বাড়লেও বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। সরকারের পক্ষে তো সবাইকে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। একই কলেজের শিক্ষার্থী মো. মিজানুর রহমান বলেন, রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে অনেক তরুণের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আবার অনেকে প্রযুক্তির কারণে চাকরি হারাচ্ছেন। এর জন্য পরিবর্তনশীল শিক্ষাব্যবস্থা ও উন্নত পাঠ্যপুস্তক তৈরি করতে হবে।

ইয়ুথ ফর পলিসির স্বেচ্ছাসেবক অলিভা রানী শীল বলেন, ‘দেশে তরুণদের লেখাপড়া ফলাফলকেন্দ্রিক। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।’ ইয়ুথ ফর পলিসির স্বেচ্ছাসেবক অন্তরা আক্তার বলেন, ই-কমার্সে তরুণদের আরও দক্ষ ও যুক্ত হতে হবে। ছোটবেলা থেকে শিশুরা নেতিবাচক পরিবেশে বড় হয়। এটি দূর করতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতন করতে হবে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, বেসরকারি খাত ও শিক্ষা খাতের সমন্বয় হলেই তরুণদের কর্মসংস্থান বাড়বে। আরও দরকার কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সামছুল হোসেন বলেন, পড়াশোনা শেষ করেই তরুণেরা হীনম্মন্যতায় ভোগে কোন দিকে যাবেন। দেশে চাকরি আছে, তবে যথেষ্ট দক্ষ লোক নেই। ইয়ুথ ফর পলিসির স্বেচ্ছাসেবক নয়ন কুমার গাইন বলেন, তরুণদের উচ্চশিক্ষা শেষে আবার সময় ব্যয় হয় দক্ষতা অর্জন করতে। সবাই সরকারি চাকরি পেছনেই ছোটেন। ইয়ুথ ফর পলিসির স্বেচ্ছাসেবক তাহিয়া তাবাসসুম বলেন, তরুণদের দ্বারা অনেক কিছুই করা সম্ভব, অথচ তরুণদের অত জায়গা দেওয়া হয় না। তাই উদ্যোক্তা হওয়ার ওপর জোর দিতে হবে।