পাঠ্যবইয়ে নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্যে আসকের বিস্ময়

এনসিটিবির ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের বইটিতে বলা হয়েছে, বেশি স্ফীত বুক এবং প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমর রেখার মাধ্যমে ঢাকা যায়। ছবি: সংগৃহীত
এনসিটিবির ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের বইটিতে বলা হয়েছে, বেশি স্ফীত বুক এবং প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমর রেখার মাধ্যমে ঢাকা যায়। ছবি: সংগৃহীত

পাঠ্যপুস্তকে কুরুচিপূর্ণ, অগ্রহণযোগ্য, বিদ্বেষ ও বৈষম্যমূলক এবং নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্যে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বিস্ময় প্রকাশের পাশাপাশি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

আজ সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ শ্রেণি ও নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইতে কিশোরীর উপযুক্ত পোশাক, আচরণ, নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয় এবং বিভিন্ন শারীরিক গড়নের মেয়েদের যেভাবে বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে তা অত্যন্ত আপত্তিজনক, দৃষ্টিকটু এবং এটি শিক্ষার্থীদের বর্ণবৈষম্যমূলক বার্তা দিচ্ছে বলে আসক মনে করছে।

আসক কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরিভাবে পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করে এ ধরনের কনটেন্ট বা বিষয়বস্তু সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

আজ প্রথম আলো অনলাইনে নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে ‘মোটা, খাটো, ফরসা, শ্যামলা মেয়েরা কেমন পোশাক পরবে?’ -শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি কিশোরীর ‘উপযুক্ত পোশাক ও নির্ধারণ করেছে পাঠ্যপুস্তক’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।

আসকের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নবম-দশম শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইটির ‘পোশাকের শিল্প উপাদান ও শিল্পনীতি’ অধ্যায়টিতে মোটা, খাটো, ফরসা, শ্যামলা বর্ণের মেয়ে বা নারীরা কোন পোশাক পরবেন, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বেশি স্ফীত বুক ও প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমর রেখার মাধ্যমে ঢাকা যায়। এতে আরও বলা হয়েছে, ফরসা মেয়েকে যেকোনো রঙের পোশাকেই সুন্দর দেখাবে। অন্যদিকে গায়ের রং শ্যামলা হলে গাঢ় রং বর্জন করে হালকা রং নির্বাচন করতে হবে, যাতে তার গায়ের রং উজ্জ্বল দেখায়।

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইটির ‘পোশাকের যত্ন ও পারিপাট্যতা’ শীর্ষক অষ্টাদশ অধ্যায়ে মানানসই পোশাকের রং নির্বাচন করে দেহের ক্ষীণতা এবং স্থূলতা ঢাকার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি শ্যামলা রঙের মেয়েদের দেহের বর্ণ কীভাবে উজ্জ্বল দেখানো যাবে, তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবার ষষ্ঠ শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বইয়ের ‘কৈশোরকালীন পরিবর্তন ও নিজের নিরাপত্তা রক্ষা’ বিষয়ক সপ্তম অধ্যায়ে কিশোরীদের দৈহিক পরিবর্তন নিয়ে সংকোচ দূর করতে উপযুক্ত পোশাক পরিধানের সুপারিশ করা হয়েছে।

আসক বলছে, পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু নির্বাচনে আরও বেশি সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসব পাঠ্যপুস্তক পড়ে নিজেকে গড়ে তুলবে, দেশ গঠনে কাজ করবে। তাদের শুরুতেই যদি নারীর প্রতি, মানুষের প্রতি অবমাননাকর এমন সব শিক্ষা দেওয়া হয় তা জাতির জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে। অন্যদিকে মেয়ে শিশুদের আত্মমর্যাদাবোধ তৈরির জন্য এসব শিক্ষা কোনোভাবেই উপযুক্ত নয়।