উড্ডয়ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিন্তার ধরন পাল্টাতে হবে

গোলটেবিল আলোচনার ফাঁকে ফটোসেশন। ছবি: সংগৃহীত
গোলটেবিল আলোচনার ফাঁকে ফটোসেশন। ছবি: সংগৃহীত

উড্ডয়ন নিরাপত্তা এমন একটা বিষয়, যা প্রত্যেক বিমান সংস্থার ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের চিন্তার ধরন (মাইন্ড সেট) পাল্টাতে হবে। এই ক্ষেত্রে বিমান সংস্থাগুলোর পাশাপাশি এ খাতের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তাদের নজরদারি, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদি নিশ্চিত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার যুগোপযোগী উন্নয়ন জরুরি। পাশাপাশি কর্মীদের দক্ষতা ও কারিগরি উৎকর্ষ এবং যাত্রী সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। মঙ্গলবার ‘এয়ারলাইনের নিরাপত্তা উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এই আলোচনার আয়োজন করে নভোএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বিশ্বের নিরাপদ এয়ারলাইনসের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

আলোচনায় উঠে আসে যে, দেশের প্রধান বিমানবন্দর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখনো ৪০ বছর আগের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বিদ্যমান। এয়ার নেভিগেশন সুবিধা যুগোপযোগী নয়। আকাশে উড়োজাহাজের ইঞ্জিনে পাখির আঘাত অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়। বিশেষ করে উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় ঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বিমানবন্দরে এখনো এয়ারগান দিয়ে পাখি তাড়ানো হয়। অথচ এখন বিশ্বে লেজার গান ও ড্রোনসহ অত্যাধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। যশোর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ের ওপরের অংশ (সারফেস) ভালো নয়। যা উড়োজাহাজের চাকা ফেটে যাওয়ার কারণ হতে পারে। এসব বিষয়সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আধুনিকায়নে গুরুত্ব দেন বক্তারা।

গোলটেবিল আলোচনায় নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, শুরু থেকেই তারা উড্ডয়ন নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, উড্ডয়ন নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পাশাপাশি গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বিমানবন্দরগুলোর অবকাঠামোর চিত্র, এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (এটিসি), যুগোপযোগী নিয়ম কানুন তৈরি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার এবং যাত্রী সচেতনতা বৃদ্ধিতেও গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

দেশের বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে একমাত্র নভোএয়ার সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক এয়ারলাইন রেটিং ডট কমের সূচকে নভোএয়ার তিন তারকা রেটিং পায়। এই ​বিষয়ে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা মফিজুর রহমান বলেন, নভোএয়ার অন্তত ছয় তারকা পেত, যদি তারা আইয়েটা অপারেশনাল সেফটি অডিট (আইওএসএ) করাতে পারত। কারণ এ জন্য তিন তারকা বরাদ্দ। কিন্তু বিমানবন্দরে নভোএয়ারের নিজস্ব হ্যাঙ্গার না থাকায় বা তাদের হ্যাঙ্গারের জন্য জায়গা বরাদ্দা না দেওয়ায় আইওএসএ অডিট করাতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পেলে আমরাও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম।’

আলোচনার শুরুতে উড্ডয়ন নিরাপত্তা বিষয়ের বিভিন্ন দিক আলোকপাত করেন নভোএয়ারের চিফ অব সেফটি আশফাক-উর-রহমান খাঁন। তাতে নভোএয়ারে বৈমানিকদের কঠিন পরীক্ষার স্তর পার করা, তাদের মানসিক সুস্থতার জন্য সাইকোমেট্রিক ও সাইকোলজিক্যাল প্রোফাইলিং পরীক্ষা; ফ্লাইট ডাটা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ, বিদেশি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে ফ্লাইট অপারেশনাল কোয়ালিটি অডিট এবং পরিচালন ও কারিগরি বিষয়ে অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরেন।

আলোচনায় নভোএয়ারের পরিচালক হাসিবুর রশিদসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের অ্যাভিয়েশন বিটের সাংবাদিকেরা অংশ নেন।