ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় আ.লীগ নেতার প্রতিবন্ধী ছেলে জামিন নিতে হাইকোর্টে

জন্মের পর থেকে ডান হাত ও ডান পায়ে শক্তি কম পান ঝিনাইদহের সুমন হোসেন (২২)। তিনি লেখেন বাঁ হাতে। হাঁটতে পারেন, তবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেই কোনোক্রমে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন সুমন। কিন্তু পড়ার টেবিল ছেড়ে এখন হাইকোর্টের বারান্দায় হন্যে হয়ে ঘুরতে হচ্ছে প্রতিবন্ধী সুমনকে।

সুমনের বাবা স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। সেই সুমনের বিরুদ্ধেই উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ। সুমনের বাবা বলছেন, ঘটনার সময় তাঁর ছেলে ঘরেই ছিল। আর মামলার বাদী বলছেন, সুমন কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গেই জড়িত নন।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয় দিন আগে (২৪ ডিসেম্বর রাত ১১টা ২৫ মিনিট) ঝিনাইদহের গোবিন্দপুর বাজারে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে ককটেল বিস্ফোরণ হামলার অভিযোগ এনে কোটচাঁদপুর থানায় মামলা করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য তাফছিরুজ্জামান। মামলায় প্রতিবন্ধী সুমন হোসেনসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

সুমন হোসেন পড়ছেন ঝিনাইদহের একটি ডিগ্রি কলেজে। আজ ২০ দিন হলো তিনি ঢাকায় আছেন। ককটেল বিস্ফোরণের মামলার আসামি হওয়ায় আগাম জামিন নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে ঘুরছেন সুমন। এখনো জামিন মেলেনি তাঁর।

সুমনের সঙ্গে মঙ্গলবার আদালতে আরও উপস্থিত ছিলেন কোটচাঁদপুর থানার বিভিন্ন নাশকতার মামলার ১৩৭ জন আসামি। আজ তাঁদের জামিন শুনানি হয়নি। আগামীকাল শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন।

ঝিনাইদহের সুমন হোসেন (২২)। ছবি: প্রথম আলো
ঝিনাইদহের সুমন হোসেন (২২)। ছবি: প্রথম আলো

সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত আদালত চত্বরে বসে সময় কাটে সুমনের। বেলা আড়াইটার দিকে যখন জানতে পারেন, আজ তাঁদের জামিন শুনানি হবে না, তখন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সুমন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আর ভালো লাগছে না। এই শরীর নিয়ে আগেও একদিন জামিন নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে এসেছিলাম। আজও আসলাম। আজ জামিন হয়নি, কাল আবার আসতে হবে।’

সুমনের বাবার নাম আবুল কাশেম। পেশায় তিনি কৃষক। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিনি। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানার সাবদালপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাশেম। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, জন্মের পর থেকে ছেলে তাঁর পঙ্গু। ঠিকমতো হাঁটাচলা করতেও পারেন না। ডান হাত ও পায়ে শক্তি কম পায় সুমন। কোনো রাজনীতির সঙ্গে নেই। লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরিও করেন।

আওয়ামী লীগ নেতা কাশেমের দাবি, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শত্রুতা করে তাঁর একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে সুমনকে ককটেল বিস্ফোরণ মামলার আসামি করেছে। তিনি বলেন, ‘ছেলের কথা ভাবলে খুব খারাপ লাগে। যেদিন যে সময় ককটেল মারার কথা বলা হচ্ছে, সে সময় তাঁর ছেলে ঘরেই ছিল। যে ঠিকমতো হাঁটতে পারে না, সে কীভাবে ককটেল মারবে?’

আসামি সুমন যে প্রতিবন্ধী, তা স্বীকার করেছেন মামলার বাদী তাফছিরুজ্জামান।

আদালত জামিন দিলে সোজা বাড়ি চলে যাবেন জানিয়ে সুমন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। আমার বাবা আওয়ামী লীগ করেন। আমার হাঁটাচলায় সমস্যা। অথচ আমার নামে ককটেল ফোটানোর মামলা দিল।’

কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবন্ধী সুমনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে।