ঢাকায় হৃদ্রোগীদের বিনা মূল্যে পিটিএমসি

হৃৎপিণ্ডের ভালভ সম্প্রসারণে বেলুন ক্যাথেটারের মাধ্যমে পিটিএমসির আবিষ্কারক জাপানি চিকিৎসক কানজি ইনোয়ি এখন ঢাকায়। তাঁর তত্ত্বাবধানে জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে বিনা মূল্যে দরিদ্র রোগীদের পারকিউটেনিয়াস ট্রান্সভেনাস মাইট্রাল কমিসুরোটমি (পিটিএমসি) করা হচ্ছে। কাল বৃহস্পতিবার শেষ হতে যাচ্ছে পাঁচ দিনের এই সেবা। গত তিন দিনে নয়জন রোগীকে পিটিএমসি করা হয়েছে। 

জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আফজালুর রহমান প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ডা. কানজি ইনোয়ি খ্যাতনামা চিকিৎসক। বিশ্বজুড়ে তাঁর সুনাম। তিনি হৃৎপিণ্ডে সরু হয়ে যাওয়া ভালভ সম্প্রসারণে বেলুন ক্যাথেটারের মাধ্যমে পিটিএমসি পদ্ধতির আবিষ্কার করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাই। গত বছর নভেম্বরে প্রথমবার বাংলাদেশে আসেন ডা.কানজি। দ্বিতীয় দফায় এ মাসে বাংলাদেশে এসেছেন। এখন তিনি ঢাকায় আছেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয়, হৃদ্‌যন্ত্রের রক্তনালিতে ব্লক (করোনারি আর্টারি ডিজিজ), জন্মগত ত্রুটি, বাতজ্বর, বার্ধক্যজনিত জটিলতা নানান কারণে হৃৎপিণ্ডের ভালভে সমস্যা দেখা দেয়। হৃৎপিণ্ডে ডান ও বাঁ পাশে দুটি করে মোট চারটি ভালভ, চারটি প্রকোষ্ঠ ও দুটি বড় ধমনি থাকে। বাঁ দিকের ভালভ হলো মাইট্রাল ও এয়োটিক এবং ডান দিকের ভালভ হলো ট্রাইকাসপিড ও পালমোনারি। হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালনায় ভালভগুলো একমুখী রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। বাতজ্বর বা রক্তনালিতে ব্লকের কারণে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হলে ভালভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভালভ সরু হয়ে যায়। পিটিএমসি পদ্ধতিতে সরু মাইট্রাল ভালভ বেলুন দিয়ে ফুলিয়ে প্রশস্ত করা হয়। ভালভ সম্প্রসারিত হয়ে হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখে।

জাপানের হৃদ্‌রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কানজি ইনোয়ি ১৯৮২ সালে প্রথমবার বেলুন ক্যাথেটারের মাধ্যমে পিটিএমসি করেন। এখন বিশ্বজুড়ে তাঁর আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। কম সময়ে সুলভে করা যায় বলে এ পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে এখন বেশ জনপ্রিয়। তাঁর নামে এর নামকরণ করা হয়েছে ইনোয়ি বেলুন ক্যাথেটার। তিনি এখন জাপানের কিয়োটোতে অবস্থিত পিটিএমসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে কর্মরত।

জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুই দফায় ডা. কানজি ইনোয়ির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের হৃদ্‌রোগ চিকিৎসকদের নিয়ে জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঁচ দিনের কর্মশালা করা হয়েছে। গত ৪ থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কর্মশালায় হৃদ্‌রোগ বিভাগের তরুণ ১৫ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নেন। ওই সময় বিনা মূল্যে ২৫ জন রোগীর পিটিএমসি করা হয়। এবারের কর্মশালাটি ২৭ জানুয়ারি শুরু হয়েছে। কাল কর্মশালা শেষ হবে। এবারও এতে অংশ নিয়েছেন ১৫ জন চিকিৎসক। ২৭ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনে বিনা মূল্যে নয়জন রোগীর পিটিএমসি করা হয়েছে। আরও দুদিন পর্যন্ত দরিদ্র রোগীরা এ সেবা পাবেন।

ডা. আফজালুর রহমান বলেন, হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। দরিদ্র ব্যক্তিদের যতটা পারা বিনা মূল্যে বা স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। ডা. কানজি প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি দরিদ্র রোগীদের পিটিএমসির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী হাসপাতালে দান করে যাচ্ছেন। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় তিনি রোগীদের জন্য দুই দফায় ৩০টি করে ৬০টি বেলুন দিচ্ছেন। এ ছাড়া চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের সময় যে থ্রিডি মডেলটি তিনি ব্যবহার করেছেন, সেটিও হাসপাতালে দান করে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান এই কর্মশালা উদ্বোধন করেন। আজ এই কার্যক্রম পরিদর্শন করে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, চীনের তৈরি বেলুন চীন ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। এগুলো দামে সস্তা। চীনের একেকটি বেলুন বাংলাদেশে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে জাপান, ইউরোপসহ উন্নত দেশের একেকটি বেলুন এক লাখ থেকে সোয়া লাখ টাকায় বিক্রি হয়।