বারবার কেন ডুবছে নৌযান?

>
  • ফিটনেসবিহীন নৌযান ব্যবহার
  • মাস্টার ও চালকের অদক্ষতা
  • সচেতন নন মালিকেরা

২২ জানুয়ারি মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ডুবে যাওয়া বালুবোঝাই বলগেটটি উদ্ধারে আট দিনেও কোনো কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। রাতে প্রচণ্ড স্রোতের টানে নোঙরের শিকল ছিঁড়ে পেছনে থাকা অপর আরেকটি নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় বলগেটটি। এভাবে মোংলা বন্দরের চ্যানেলে বারবার নৌযানডুবির ঘটনায় ফিটনেসবিহীন নৌযান ব্যবহার এবং মাস্টার ও চালকদের অদক্ষতার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারী ও সুন্দরবন নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের মোংলা শাখার সহসভাপতি মো. মাইনুল হোসেন জানান, সুনামগঞ্জ থেকে ১৪ হাজার ফুট লাল বালু বোঝাই করে এমভি জুবায়ের বলগেটটি খুলনা যাওয়ার পথে ২২ জানুয়ারি মোংলা বন্দরের পশুর নদীর বানীশান্তা এলাকায় নোঙর করে অবস্থান নেয়। গভীর রাতে প্রচণ্ড স্রোতের টানে বলগেটের নোঙরের শিকল ছিঁড়ে পেছনে থাকা একটি টাগ বোটের সঙ্গে সেটির ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই বালুবোঝাই বলগেটটি ডুবে যায়। বলগেটে থাকা ৯ জন কর্মচারী সাঁতরে পাশের নৌযানে উঠে যাওয়ায় কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মালিকপক্ষ এটি উদ্ধারে কোনো তৎপরতা শুরু করেনি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার দুরুল হুদা বলেন, নৌযানটি ডোবায় মূল চ্যানেলে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। বন্দর চ্যানেল ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। ডুবে যাওয়া বলগেটটি দ্রুত অপসারণ করতে মালিকপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে অসংখ্য নৌযানডুবির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল চ্যানেলের হারবাড়িয়ায় কয়লা নিয়ে এমভি বিলাস, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ক্লিংকার নিয়ে এমভি শোভা, ১২ জানুয়ারি কয়লা নিয়ে এমভি আইচগাতী, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর কয়লা নিয়ে এমভি জিয়া-রাজ, ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ফার্নেস অয়েল নিয়ে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭, একই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ক্লিংকার নিয়ে এমভি হাজেরা-২ ও ৩০ সেপ্টেম্বর ক্লিংকার নিয়ে এমভি নয়নশ্রী-৩ পশুর নদে ডুবে যায়।

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. শাহিন কবির বলেন, বিগত নৌযানডুবির ঘটনায় গঠিত বন বিভাগের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফিটনেসবিহীন নৌযান ব্যবহার এবং মাস্টার ও চালকদের অদক্ষতার বিষয়টি উঠে আসে।

সুন্দরবন নিয়ে গবেষণাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনসংলগ্ন পশুর নদে প্রতিবছরই নৌযানডুবির ঘটনায় ডুবন্ত নৌযানের জ্বালানি ছড়িয়ে পড়ায় পানিদূষণের পাশাপাশি সুন্দরবনের জলজ ও প্রাণিসম্পদের ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে। বিগত দুর্ঘটনাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এলেও সচেতন হননি মালিকেরা। ঘনঘন দুর্ঘটনার কারণে উঠে আসছে বন্দর কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার চিত্রও। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি সজাগ হতে হবে এবং ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও শিপিং ব্যবসায়ী হোসাইন মোহাম্মদ দুলাল অভিযোগ করেন, পশুর চ্যানেল ও সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নৌযানডুবির ঘটনায় কিছু অসাধু নৌযানমালিকের ইনস্যুরেন্সের সুযোগ-সুবিধা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফিটনেসবিহীন নৌযান ব্যবহার এবং অতিরিক্ত পণ্যবোঝাইও নৌদুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের মোংলা শাখার সহসভাপতি মো. মাইনুল হোসেন বলেন, চ্যানেলে নাব্যতা-সংকট ও পর্যাপ্ত মার্কিং বয়া না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে।