কেউ অবহেলিত ভাবলে চলবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করেন। ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করেন। ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার সম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন,‘যখন আমরা উন্নয়নের কথা বলি তখন আমরা জাতি, ধর্ম বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথাই বলি।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৫০০ শিক্ষার্থীকে এ শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হয়। প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকার বৃত্তি দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ জন শিক্ষার্থীর হাতে বৃত্তির চেক তুলে দেন। আগামী বছর থেকে এই বৃত্তিপ্রাপ্তের সংখ্যা ২ হাজারে উন্নীত করা হবে বলে জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এখানে কাউকে এটা মনে করলে চলবে না যে, আমরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বা আমরা অবহেলিত সেটা ভাবলে চলবে না। এই দেশের নাগরিক সবাই এবং প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ ধর্ম, বর্ণ, জাতি গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার থাকবে এবং আমরা সেটাই নিশ্চিত করতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য এবং দেশটা আমাদের সকলের এই কথাটা মনে রেখে যার যার ক্ষেত্রে সবাইকে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে শিক্ষা মন্ত্রী দিপু মনি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. সাজ্জাদুল হাসান এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) খলিলুর রহমান। বরগুনার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বুয়েটের শিক্ষার্থী মিয়াট বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

এ ছাড়া, সমতলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের জীবন-মান উন্নয়ন, বৃত্তিপ্রাপ্তদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং প্রকল্পের নানা দিক সংবলিত কয়েকটি ছোট ছোট ভিডিও চিত্র অনুষ্ঠানে দেখানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নিজস্ব পেশাকে ধরে রেখে এর সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘যে কোনো কাজের একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ঐতিহ্যগত গুরুত্ব রয়েছে। সেই গুরুত্বটা আমাদের দিতে হবে। যার যার পেশাকে ধরে রেখে এর আধুনিকায়নের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে হবে।’

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩০ লাখ ৮৭ হাজার । এর মধ্যে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং ১৫ লাখ সমতলে বসবাস করে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘বৈচিত্র্যের মাঝেই ঐক্য হচ্ছে- বাংলাদেশের সংস্কৃতির এক উজ্জ্বলতম বৈশিষ্ট্য। ’ ‘এই যে নানা মানুষ, নানান ধর্ম, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস- সবকিছু মিলে যে বৈচিত্র্য এটা কম দেশেই পরিলক্ষিত হয়।’

নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক পরে বৃত্তির চেক নিতে আসায় শিক্ষার্থীদের প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কাজের প্রয়োজনে সবাই আনুষ্ঠানিক পোশাক পরবে সেটা স্বাভাবিক তবে, নিজস্ব সংস্কৃতির স্বকীয়তাও মাঝে মাঝে প্রকাশ করার প্রয়োজন রয়েছে। তাতে আমাদের দেশে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির যে বৈচিত্র্য তাও মেলে ধরার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়।’

সমতলের ৫৫টি জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ‘বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে, ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার কর্মসূচিটি বন্ধ করে দেয় এবং ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এসে এটি চালু করে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।