সর্বাত্মক প্রতিবাদ

>নানা ঘটনার ধারাবাহিকতা ও সমারোহে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠেছিল অনন্য ইতিহাস। সেসবের কিছু উজ্জ্বল মুহূর্তের প্রথম কাহিনি নিয়ে এ আয়োজন।

অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট ছিল একটি মাইলফলক। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এটিই ছিল এ দেশের প্রথম সফল হরতাল। এ দিনটির কাছে আসতে হলে তার আগে ওই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসভার কথা বলতে হবে। উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সরকারি ভাষানীতির প্রতিবাদে দেশব্যাপী হরতাল, সভা ও মিছিলের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাধারণ ছাত্রসভার সুপারিশ অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি তমদ্দুন মজলিস ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের যৌথ বৈঠকে প্রতিবাদ দিবসের দিন ধার্য করা হয় ১১ মার্চ।

আন্দোলন সফল করার জন্য আবদুল গনি রোডে, অর্থাৎ সেক্রেটারিয়েটের প্রথম গেটের সামনে অবস্থান নেন শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ প্রমুখ ছাত্রনেতা। দ্বিতীয় গেটের সামনে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন কাজী গোলাম মাহবুব, শওকত আলী প্রমুখ। পলাশী ও নীলক্ষেত ব্যারাক, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ, রমনা পোস্ট অফিস এলাকায়ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। এ আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্বে আরও ছিলেন মোহাম্মদ তোয়াহা, তাজউদ্দীন আহমদ, ডা. করিম। মেডিকেল শিক্ষার্থীরাও আবদুল গনি রোড, পলাশী ও নীলক্ষেত ব্যারাকে সক্রিয় ছিলেন।

পুলিশ নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি চালায়। পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেলা আড়াইটার দিকে সংগ্রাম পরিষদের সদস্য নঈমুদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ছাত্ররা প্রতিবাদসভা করে। সভা শেষে যে মিছিল বের হয়, তাতে পুলিশ বুটের লাথি চালায়, ব্যাটন ব্যবহার করে। সরকারি গুন্ডাবাহিনী কমিউনিস্ট পার্টির অফিস তছনছ করে দেয়। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এতে আহত হন। অনেক ছাত্র পুলিশি নির্যাতনের মুখে পড়ে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ মার্চ ঢাকা শহরের শিক্ষায়তনে ধর্মঘট পালিত হয় ১৪ মার্চ সারা দেশে হরতাল পালিত হয়। ১৫ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের সঙ্গে আপস–মীমাংসার প্রস্তাব দেন। সেই মীমাংসা সভায় সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন কামরুদ্দীন আহমদ এবং সরকারপক্ষে মুখ্যমন্ত্রী নাজিমুদ্দিন।

তবে এর আগে ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলতলায় ছাত্রসভা শেষে ছাত্র শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন। এটি ঢাকার বিভিন্ন রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। পাকিস্তান সরকারের বাংলা ভাষাবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এটি ছিল প্রথম স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল।

তথ্যসূত্র: ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য, আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক