দৌড়ে গিয়েও বাঁচতে পারলেন না আ.লীগ নেতা

ময়মনসিংহের নান্দাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মুর্শেদ আলী হত্যার জেরে উত্তেজিত জনতা সন্দেহভাজন হত্যাকারী ও তাদের স্বজনদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবি: প্রথম আলো
ময়মনসিংহের নান্দাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মুর্শেদ আলী হত্যার জেরে উত্তেজিত জনতা সন্দেহভাজন হত্যাকারী ও তাদের স্বজনদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নান্দাইলে মো. মুর্শেদ আলী (৫৫) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার পশ্চিম দত্তপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মুর্শেদ উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এর জের ধরে ওই এলাকার কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগানো ও দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুর্শেদ রাজনীতির পাশাপাশি কানুরামপুর পূর্ব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ব্যবসা করতেন। গতকাল রাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে মোটরসাইকেলে করে পশ্চিম দত্তপুর গ্রামে বাড়ির দিকে রওনা হন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মো. মজিবুর রহমান (৫৫) ও নাজিম উদ্দিন (৬০)। বাড়ির কাছাকাছি কানুরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় তিনি দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন।

মুর্শেদের সঙ্গীদের ভাষ্য, দুর্বৃত্তরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে সড়কের দুই পাশের গাছের সঙ্গে আড়াআড়ি লোহার তার (জিআই তার) বেঁধে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখে। মুর্শেদ মোটরসাইকেলের গতি কমালে দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তিনি প্রাণ বাঁচাতে দৌড় দিয়ে রাস্তার পাশে ফসলি জমিতে নেমে যান। দুর্বৃত্তরা তাঁর পিছু ধাওয়া করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তিনি জমিতেই লুটিয়ে পড়েন। মুর্শেদকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন মজিবুর রহমান। হামলায় তাঁর দুই পা হাঁটুর নিচ থেকে ভেঙে গেছে। দুর্বৃত্তদের হামলায় অন্য আরোহী নাজিম উদ্দিনও আহত হন। তবে ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ। গুরুতর আহত মজিবুরকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সময় তিনি কয়েকজন হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি খুন হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক ঘটনাস্থলে জড়ো হন। এ সময় কথিত হামলাকারীদের নাম ও পরিচয় সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা মধ্যরাতে পাশের কুতুবপুর গ্রামে ঢুকে তাদের বাড়ি ও স্বজনদের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে ৩০-৩৫টি ঘর পুড়ে গেছে। একই সময় কানুরামপুর পশ্চিম বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

মুর্শেদের ভাতিজা আবু হানিফের দাবি, গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তাঁর চাচা নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের দিন তাঁর চাচার সঙ্গে কুতুবপুর গ্রামের বিএনপি কর্মী মো. সুমন মিয়ার ঝগড়া হয়। তাঁর চাচার সমর্থকদের হামলায় সুমন ওই সময় আহত হয়েছিলেন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই সুমন তাঁর চাচাকে খুন করেছেন।

মুর্শেদ আলীর আরেক ভাতিজা জাহাঙ্গীর হোসেনের দাবি, তাঁর চাচাকে হত্যা করার পর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য খুনি ও তাদের স্বজনেরা নিজেদের বাড়িঘরে নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান। মুঠোফোনে তিনি বলেন, মানুষের প্রতিবন্ধকতার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি কুতুবপুর গ্রামে প্রবেশ করতে পারেনি।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম মিয়া আজ বেলা একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। উত্তেজনা কমাতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ ২৫০ শয্যার কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।