ভুলের কারণ অবহেলা

এসএসসি পরীক্ষা। প্রথম আলো ফাইল ছবি।
এসএসসি পরীক্ষা। প্রথম আলো ফাইল ছবি।
>

• বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্র বিতরণে ভুল
• ভুল নিয়ে রোববার সংসদে আলোচনা
• ভুল প্রশ্নপত্রের উত্তর ভিন্নভাবে দেখা হবে
• দায়ীদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে

কেন্দ্রসচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অবহেলার কারণেই গত শনিবার এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে প্রশ্নপত্র বিতরণে ভুল হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এমনটাই বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার বিকেলে জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, যেসব কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা ভুল প্রশ্নপত্রে (বাংলা প্রথম পত্র) পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের উত্তরপত্র ভিন্নভাবে দেখা হবে। যাতে কেউ কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যে কেন্দ্রগুলোতে এই সমস্যা হয়েছে, সেখানকার কেন্দ্রসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। যাঁদের ভুলের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, ইতিমধ্যে তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্নে জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চান, কার ভুলে এ ঘটনা ঘটেছে এবং শিক্ষার্থীদের কী হবে? অপর এক সম্পূরক প্রশ্নে একই দলের সাংসদ ফখরুল ইমাম জানতে চান, কীভাবে মানদণ্ড ঠিক করা হবে? ওই শিক্ষার্থীদের আরেক দিন পরীক্ষা নেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আবার পরীক্ষা নিলে ভিন্ন প্রশ্নে তাদের পরীক্ষা দিতে হবে। সেখানেও কিন্তু সমান মানদণ্ড দেওয়া যাবে না। ঘটনার বাস্তবতায় সব থেকে ভালো সমাধানটিই তাঁরা বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এর আগে সকালে রাজধানীর বকশীবাজারে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ায় দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত শনিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনে চট্টগ্রাম, জামালপুর, নওগাঁ, শেরপুর, সাতক্ষীরা, মুন্সিগঞ্জ, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাট ও মাদারীপুরে ১৮টি কেন্দ্রে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। প্রশ্নপত্র ছিল পুরোনো পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য। ভুলটি কীভাবে হলো, তা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের আলাদা কক্ষে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ ছিল। কিন্তু যেসব কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে দেখা গেছে, নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের এক কক্ষে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চবিদ্যালয়, পতেঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় ও গরীবে নেওয়াজ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র গতকাল পরিদর্শন করে তাঁরা বিষয়টি দেখতে পেয়েছেন।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, জামালপুর সদর উপজেলা ও মাদারীপুরের কালকিনিতেও যে তিনটি কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়, সেখানেও নিয়মিত এবং অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের এক কক্ষে বসানো হয়।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সোহরাব হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রশ্নপত্র বা উত্তরপত্র-সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে বিদ্যমান যে নীতিমালা আছে, তাতে এই পরীক্ষার্থীরাও কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সেভাবেই উত্তরপত্র দেখা হবে।

চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি কেন্দ্রের জন্য থানা ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র যাচাই (শর্টিং) করে নেওয়ার সময় ভুল করে ১০১ কোডের (বাংলা প্রথম পত্র) বদলে ১২৬ কোডের (উচ্চতর গণিত) কয়েকটি প্যাকেট প্রশ্নপত্র (এমসিকিউ) চলে যায়। এ ঘটনায় কেন্দ্রসচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসান।