এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত

জাহালম।  ফাইল ছবি
জাহালম। ফাইল ছবি

একজনের অপরাধে শাস্তি পাচ্ছেন অন্যজন। নাটক–সিনেমায় এ রকম ঘটনা ঘটতে দেখা যায় প্রায়ই। কিন্তু বাস্তবের ঘটনা অনেক সময় সিনেমাকেও হার মানায়। জাহালমের ঘটনা তেমনই। সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিন বছর জেল খেটে মুক্তি পেয়েছেন জাহালম।

চেহারার মিলের কারণে পেশায় পাটকলশ্রমিক জাহালমের জীবনে নেমে এসেছিল এই ঘোর অমানিশা। অথচ প্রকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আবু সালেক। ব্যাংক, দুদক, পুলিশ ও আদালত—এই চারটি পক্ষই জাহালমকে মনে করেছে আবু সালেক। অন্যদের ভুলে জাহালমের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে মূল্যবান তিনটি বছর।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং গণমাধ্যমের আন্তরিক চেষ্টায় অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন নিরপরাধ জাহালম। প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে পাঠকদের কাছে এ ঘটনার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল। সাড়ে তিন ঘণ্টায় সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মন্তব্য জমা হয়। বেশির ভাগ পাঠক এ ঘটনায় তাঁদের ক্ষোভ ব্যক্ত করেন এবং কারাগারে এ রকম আরও অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি থাকতে পারে সন্দেহ করে তাঁদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে বলেন।

রবিউল ইসলাম লিখেছেন, ‘কিছু ভাবছি না। উনি যে বের হতে পেরেছেন, তাই আলহামদুলিল্লাহ। এ রকম হাজার হাজার নিরপরাধ জাহালম এখনো জেলে আছে। এক জাহালমকে নিয়ে খুশিতে ফেটে পড়তে চাই না। সব নিরপরাধ জাহালম মুক্তি পাক...।’

হোসাইন ফারুক লিখেছেন, ‘দুদক থেকে জরিমানা করে তাকে দিতে হবে—তিন বছরে তার গড় আয়ের সমপরিমাণ অর্থ, অহেতুক কষ্ট দেওয়ার কারণে এক কোটি টাকা জরিমানা, আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে রাখার জন্য আরও এক কোটি টাকা।’ শরীফ মাহামুদ লিখেছেন, ‘যেসব অফিসার তদন্তের দায়িত্বে ছিল, আগে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। কেন বিনা দোষে একজন মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে? এর বিচার করে দেখাতে হবে। আর তার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া জরুরি।’

আঞ্জুমান নিশি লিখেছেন, ‘এর জন্য যারা তাঁর শাস্তি প্রদান করছে তাদের এখন শাস্তি দেওয়া উচিত। তাঁকে ফিরিয়ে দিক গত তিন বছরের স্বাধীন জীবন।’ শাহেদুল আলম (নিশান) লিখেছেন, ‘সরকার ওনার হারিয়ে যাওয়া সময়গুলা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। তাই তাঁকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। আর যারা এর পেছনে দায়ী তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। আমি মনে করি, এখনো এই রকম আরও অনেক জাহালম রয়েছে দেশের কারাগারগুলায়, তাদের খুঁজে বের করা হোক।’

শুভ্রদেব ঘোষ লিখেছেন, ‘যে কর্মকর্তাদের জন্য জাহালম জেল খেটেছে, তাদের ডেকে এনে সকল টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে একযোগে জাহালম তথা তার পরিবার-আত্মীয়স্বজনের কাছে মাফ চাইতে হবে। এবং এই মাফ চাওয়ার অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে।’ শাকিলা আক্তার দিলরুবা লিখেছেন, ‘দুদকের বিচার হওয়া উচিত যাতে এ রকম অবিচার বা বিনা অপরাধের কারণে কারও জীবন থেকে মূল্যবান সময় কেউ কেড়ে না নিতে পারে। আর তার তিনটা বছরের ক্ষতি যা হওয়ার তো হয়েছে, সেটা তো আর ফিরে পাওয়ার নয়, তাও আশা করছি সে যেন তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ সরকারের কাছ থেকে পায়। আরও বলব, সারা দেশে এ রকম শত শত নিরপরাধ মানুষ হয়েও অপরাধী হয়ে জেলের ঘানি টানছে তাদের খুঁজে খুঁজে ঘানি টানা থেকে রেহাই দেওয়া হোক।’

আলি পরম মনে করেন, এ অপরাধের বিচার না হলে ভবিষ্যতে এগুলো আরও বাড়বে। তিনি লিখেছেন, ‘সঠিক তদন্ত না করে বিনা অপরাধে আটকে রাখাও আমি মনে করি একটি অপরাধ। তাই যাঁরা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁদেরও শাস্তি হওয়া দরকার। নইলে যাকে–তাকে ধরে আটকে রাখার প্রবণতা বাড়বে।’ মশিউর রহমান লিখেছেন, ‘মূল আসামিকে বাঁচানোর জন্য ওকে ফাঁসানো হয়েছে, নেপথ্যে তদন্তকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অনেক রাঘববোয়ালের নাম বেরিয়ে আসবে যদি সুষ্ঠু তদন্ত হয়। আর ক্ষতিপূরণ তো অবশ্যই দিতে হবে।’

রাকিব আল হাসান লিখেছেন, ‘তিনটা বছর ফিরিয়ে দিক ওনার জীবনের, না পারলে অনুশোচনায় পদত্যাগ করুক, ক্ষমা প্রার্থনা করুক। যদি উনি ক্ষমা করে তাহলেই চূড়ান্ত বিচার হবে।’

জাহালমের মুক্তিতে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করে জাশনূর রাজা লিখেছেন, ‘প্রথম আলো পত্রিকাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, একজন নিরপরাধ মানুষের পাশে থাকার জন্য। তার জীবনে যে তিনটা বছর হারায় গেছে তার সঠিক ক্ষতিপূরণ যেন সে পায়।’ মো. নুরুজ্জামান লিখেছেন, ‘অধিক সতর্কতার সঙ্গে সব কার্যক্রম সম্পাদন করা উচিত। তাতে নিরপরাধ মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়। সুন্দর হোক তাদের পারিবারিক জীবন।’ মুশফিক রুবেল লিখেছেন, ‘কমপক্ষে এক কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে এবং দুদককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে অথবা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে।’

মিজান রহমান মনে করেন, এসব ঘটনায় বড় অঙ্কের জরিমানার বিধান থাকা উচিত, ‘দুদককে বড় মাপের জরিমানা ধরা হোক, যাতে করে জাহালমের মতো নিরপরাধ মানুষকে জড়ানোর আগে হাজারবার ভাবতে হয়।’ দীপঙ্কর বড়াল লিখেছেন, ‘আইনি ভাষায় একটা কথা আছে—দশজন অপরাধী শাস্তি থেকে রেহাই পেলেও একজন নিরপরাধ যেন শাস্তি না পায়। আর এটা যখন হয় তখন এটার সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা–কর্মচারী খুব নিকৃষ্ট কাজ করেছে। এটা ভুল নয়, অপরাধ। আর ভুলের ক্ষমা হলেও অপরাধের হয় শাস্তি।’

গণমাধ্যমকর্মীদের জাহালমের পাশে থাকা উচিত বলে মনে করেন শ্রাবণ হাসান নীল। তিনি লিখেছেন, ‘সাংবাদিকেরা যদি এখন লোকটির পাশে থেকে তার তিন বছরের ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেয় তাহলে ভালো হবে, আমরা সাধারণ জনতা শুধু মন্তব্য ছাড়া কিছুই করতে পারব না। তাই প্রথম আলোকে বলব লোকটির পাশে দাঁড়ান।’ ইয়াকুব শরিফ লিখেছেন, ‘উন্নত বা সভ্য দেশে এ রকম কিছু হলে বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাত, কয়েক মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হতো।’

প্রিয়াশিষ চাকমা লিখেছেন, ‘আজকাল সত্য মিথ্যা হয়, আর মিথ্যা সত্য হয়। সত্য কথা বলতে গেলে ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। তবে সত্যের জয় ধীরগতিতে হয়। তবুও সত্যের পাশে থাকা অত্যাবশ্যক।’ শোয়েব আকতার লিখেছেন, ‘বাংলা‌দে‌শে আসল অপরাধী খুব কমই সাজা পায়। সমা‌জে যারা দুর্বল, দরিদ্র, সুপারিশ করার মতো মানুষ নেই, কেবল তা‌দের কার‌ণে–অকারণে শাস্তি ভোগ কর‌তে হয়।’