জাহালমের মুক্তিতে স্বস্তি; ক্ষতিপূরণের দাবি টিআইবির

জাহালম। ফাইল ছবি
জাহালম। ফাইল ছবি

বিনা অপরাধে তিন বছর কারাবাসের পর হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে পাটকলশ্রমিক জাহালম মুক্তি পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তবে জাহালমের জীবন থেকে মহামূল্যবান তিনটি বছর নষ্ট হওয়ায় অবিলম্বে তাঁকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি সংস্থাটির। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে টিআইবি।

আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এসব দাবি জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নিরপরাধ জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ এবং ভুল তদন্তে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে আদালত ন্যায়বিচারের গুরুতর বিচ্যুতির অবসান ঘটিয়েছেন। তবে জাহালম মুক্তি পেয়ে গেছেন, এটা ভেবেই আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। বরং মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁকে অবিলম্বে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যদিও জাহালমকে যে অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তার প্রকৃত ক্ষতিপূরণ কখনোই সম্ভব নয়। ’ এই বিবেচনা থেকেই এই ঘটনার গুরুত্ব নির্ধারণ করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই ঘটনায় (জাহালম) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এতে করে কমিশনের প্রতি দেশের জনগণের আস্থাহীনতা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তাই কীভাবে এই ঘটনা সংঘটিত হলো, কারা জড়িত ছিলেন, কেন এমন ভুল তাঁরা করলেন, নাকি প্রকৃত অপরাধীর সঙ্গে যোগসাজশে তাঁরা এই জালিয়াতিতে অংশগ্রহণ করেছেন—এসব বিষয়ই তদন্ত করে দেখতে হবে। দুদক যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, সে কমিটির সদস্যরা সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং তদন্তের ফলাফল ও তার ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ গৃহীত হলো, সে সম্পর্কে দুদক দেশের জনগণকে অবহিত করবে, সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। এই তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের অবিচার আর কারও সঙ্গে না হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘জাহালমের এই ঘটনা আরও কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যার উত্তর পাওয়াটা জরুরি। যেমন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গত বছরের মে মাসেই বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিত করেছিল। তারপর দীর্ঘ আট মাসেও দুদক কেন কোনো পদক্ষেপ নিল না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। এখানে কোনো যোগসাজশের সম্ভাবনা তদন্ত ছাড়া নাকচ করে দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। সে ক্ষেত্রে দুদক কর্তৃপক্ষকে তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। ’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, জাহালমের মতো আর কেউ এভাবে বিনা বিচারে কারভোগ করছেন না এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। শুধু দুঃখ প্রকাশ নয়, জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দুদক আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হবে, বলেও আশা প্রকাশ করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।

গতকাল রোববার রাত একটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুরের কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে মুক্তি পান জাহালম। সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির ২৬টি মামলা থেকে জাহালমকে এক দিনের মধ্যেই অব্যাহতি দিয়ে গতকাল রোববার সকালে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মূল আসামি আবু সালেকের বদলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়। রাতে মুক্তি পাওয়ার পর বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকের জাহালম বলেন, ‘আমাকে বিনা বিচারে আটকে রেখেছে। আমি দুদকের বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ চাই। ’ যাদের জন্য বিনা বিচারে জেলে আটকে ছিলেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান তিনি।

গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আনা হলে হাইকোর্ট জাহালমের আটকাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে জাহালমের গ্রেপ্তারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতিনিধি ও আইনসচিবের প্রতিনিধিকে ৩ ফেব্রুয়ারি (গতকাল) সকাল ১০টায় আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান, মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্রসচিবের (সুরক্ষা) প্রতিনিধি যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন ও আইনসচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম আদালতে হাজির হন।

বিনা অপরাধে জাহালমের তিন বছর কারাভোগের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সোমবার এ কথা জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, জাহালমের ঘটনায় দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের যদি কোনো গাফিলতি থেকে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা জজ পদমর্যাদার দুদকের একজন পরিচালককে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে।