কর্ণফুলী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু

কর্ণফুলী নদী। ফাইল ছবি
কর্ণফুলী নদী। ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কার্যক্রম আজ সোমবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো ধরনের বাধার মুখে পড়তে হয়নি প্রথম দিন। তবে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ফোনে হুমকি ধমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উচ্ছেদ অভিযানের প্রথম দিন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় টিনের স্থাপনা থেকে শুরু করে শিল্পপতির পাকা দালান। নগরের সদরঘাটে লাইটার জেটি এলাকা থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। বুলডোজার দিয়ে অভিযান শুরুর আগে সকাল ৯টা থেকে এলাকায় প্রায় ২০০ পুলিশ, ৬০ র‍্যাব, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, বন্দরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা অবস্থান নেন।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান ও তৌহিদুর রহমানের নেতৃত্বে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলে। প্রথম দফায় সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত ২০০ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।

তাহমিলুর রহমান বলেন, কয়েকটি ধাপে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে। প্রথম ধাপে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত উচ্ছেদ চলবে। এখানে প্রায় ২০০ অবৈধ স্থাপনা আছে। সেগুলো উচ্ছেদ করতে পারলে ১০ একর ভূমি উদ্ধার হবে। তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষের পর ধাপে ধাপে আরও দুটি স্থানে কাজ শুরু করা হবে। বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে পতেঙ্গা এবং সদরঘাট থেকে চাক্তাই এলাকায়ও উচ্ছেদ কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে শুরু হবে।

প্রথম দফায় লাইটার জেটি এলাকায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একটি অবৈধ লোহার স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ‘সদরঘাট সাম্পান চালক সমবায় সমিতি’ নামে একটি সংগঠনের অবৈধ কার্যালয়, যাত্রী ছাউনি, একই সঙ্গে বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনির ঘর ভেঙে দেওয়া হয়।

এরপর অভিযান শুরু হয় পাশের কর্ণফুলী ঘাট এলাকায়। সেখানে কয়েকটি টিনের ছাউনির ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনায় শ্রমিকেরা থাকতেন। শ্রমিক জুনায়েদ ও তোতা মিয়া বলেন, তাঁরা লাইটার জাহাজ ও নৌকায় পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা এসব ঘরে থাকতেন। এখন মালামাল নিয়ে সরে গেছেন।

এরপর দুপুর ১টার দিকে শুরু হয় আলোচিত শিল্পপতি মো. রশিদের মালিকানাধীন কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কার্যক্রম। তবে উচ্ছেদ শুরু হওয়ার আগেই নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি তাদের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করে। গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে ফেলা হয় লোহার পিলার। সরিয়ে নেওয়া হয় আসবাব। তবে এরপরও প্রতিষ্ঠানটির মূল স্থাপনায় নদীর অংশ রয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে বুলডোজার দিয়ে দুটি দেয়াল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) নজরুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৪ সালে জেলা প্রশাসন থেকে দশমিক ৫৩২১ একর খাসজমি ইজারা নিয়ে একটি কোল্ড স্টোরেজ করা হয়। এ ছাড়া নদীর তীরবর্তী ৮৪ ফুট ৯ ইঞ্চি পাড়ের জায়গা ২০ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া হয়। সেখানে ২০১০ সালে গড়ে তোলা হয় ছোট জেটি।

বেলা একটার দিকে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিদর্শনে যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর আক্তার হোসেনসহ অন্যরা। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। কোনো ধরনের বাধা নেই। তবে ম্যাজিস্ট্রেটদের ফোনে হুমকি দেওয়া হয়।

উচ্ছেদ কার্যক্রম চলাকালে হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগে জসিম উদ্দিন নামে এক যুবককে আটক করে হাতকড়া পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর আক্তার হোসেন বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলে মালামাল লোড-আনলোডের কাজ সহজ হবে।

প্রসঙ্গত, আইনজীবী মনজিল মোরশেদের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে দুই হাজার ১২২টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন হাইকোর্টে জমা দেয়। এর পরের বছর হাইকোর্ট স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। সর্বশেষ গত বছর হাইকোর্ট আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। এর পর আজ উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়।