'নিহত হাফিজুর নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের প্রতিচ্ছবি'

হাফিজুর মোল্লা
হাফিজুর মোল্লা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম কার্যক্রমের ধকল সইতে না পেরে নিহত মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাফিজুর মোল্লাকে স্মরণ করল বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। তাঁর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ছাত্র সমাবেশ করে সংগঠনটি বলেছে, ‘গেস্টরুম নির্যাতনে নিহত হাফিজুর মোল্লা নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের প্রতিচ্ছবি।’

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার অটোরিকশাচালকের ছেলে হাফিজুর মোল্লা ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। জানুয়ারির শীতে উঠেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে, থাকতেন হলের বারান্দায়। ভর্তির এক মাস না যেতেই নিউমোনিয়া ও টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি। হাফিজুরের পরিবারের সদস্য ও সহপাঠীরা অভিযোগ করেছিলেন, শীতের মধ্যে বারান্দায় থাকা ও রাতের বেলায় ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যাওয়ার কারণে তিনি ঠান্ডায় আক্রান্ত হন।

ছাত্র ফেডারেশনের সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এর জন্য শিক্ষক হিসেবে আমি লজ্জিত। হাফিজুর মোল্লা হত্যার বিচার চাই।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের আধিপত্য ও সন্ত্রাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সহযোগিতা করে থাকে। গণরুম আর গেস্টরুমের মতো অমানবিক সংস্কৃতির মধ্যে থেকে শিক্ষার্থীদের গবেষক হয়ে ওঠা সম্ভব নয়। গেস্টরুম নির্যাতনে নিহত হাফিজুর মোল্লা হাজারো নির্যাতিত শিক্ষার্থীর প্রতিচ্ছবি। হলগুলোতে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে প্রথম বর্ষ থেকেই মেধার ভিত্তিতে আসন বণ্টনের দাবি আমরা অনেক আগে থেকেই জানিয়ে আসছি। হাফিজুর মোল্লা স্বাভাবিকভাবে মারা যাননি, ছাত্রলীগের নিপীড়নে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এটা হত্যাকাণ্ড। এর বিচার হতেই হবে।’ ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ার সামনের চত্বরকে ‘হাফিজ চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।

ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক, সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে ক্যাম্পাসে মিছিল করে সংগঠনটি।