হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র দাবি বামপন্থী দুই জোটের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানিয়েছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর দুই মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। শ্রেণিকক্ষে প্রচার ও প্রচারণায় জাতীয় নেতাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দাবি করেছে তারা। দুই জোটের নয়টি সংগঠনের অভিযোগ, তারিখ ঘোষণা নিয়ে তোড়জোড় থাকলেও নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্জীব।

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। আগামী মার্চের মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন দাবি করে দুই সংগঠনের নেতারা বলেন, তাঁদের দাবি পূরণে প্রশাসনকে বাধ্য করতে আন্দোলন জোরদার করবেন।

ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে করা ও শ্রেণিকক্ষে প্রচারণার সুযোগসহ ছয় দফা দাবিতে কাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় সংহতি সমাবেশ করবে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। ১১ ফেব্রুয়ারি বেলা একটায় ক্যাম্পাসে যৌথভাবে বিক্ষোভ করবে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যভুক্ত সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের (বদরুদ্দীন ওমর) কেন্দ্রীয় সভাপতি এম এম পারভেজ লেলিন। দুই জোটের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি।

বামপন্থী দুই জোটের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পাস ও হলে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান ও স্বাধীন মতের পরিবেশ নিশ্চিত করা; গেস্টরুম ও গণরুমে ছাত্র নির্যাতন বন্ধ ও সব নির্যাতনের বিচার করা; মেধা ও প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে প্রথম বর্ষ থেকেই হলে বৈধ সিটের ব্যবস্থা এবং নির্বাচনের তফসিলের আগেই ডাকসু ও হল সংসদের ফি প্রদানকারী সব শিক্ষার্থীর ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা।

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ‘ডাকসু নির্বাচনের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন ক্যাম্পাসে ও হলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণ ও সহাবস্থান। কিন্তু এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা আমাদের চোখে পড়েনি। বিরোধী ছাত্রসংগঠন ও কোটা আন্দোলনের নেতাদের ওপর গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার বিচার তো হয়ইনি, বরং প্রশাসন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সুরেই সুর মিলিয়েছে। এসব ঘটনা আমাদের আশঙ্কাকে আরও মজবুত করছে যে এ নির্বাচন আদৌ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে কি না!’

তাঁরা বলেন, ইউজিসির কৌশলপত্র, গবেষণায় বরাদ্দ কমিয়ে ও শিক্ষার্থী–অধিকারগুলো ক্রমাগত সংকুচিত করে বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্রমেই জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রের পরিবর্তে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করে তার হাতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার তুলে দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল অংশীজন শিক্ষার্থীদের মতামত ছাড়াই প্রায় তিন দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হচ্ছে। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিণত হচ্ছে একেকটি মৃত প্রতিষ্ঠানে। এই মৃত দশা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রশাসনের সদিচ্ছা আর উদ্যোগ একান্ত জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি জি এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইমরান হাবিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন, ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিপুল চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনীক, ছাত্র গণমঞ্চের সভাপতি সাইদ বিলাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।