শিশু ইমনকে হত্যার দায়ে ইমামসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড

শিশু মোস্তাফিজুর রহমান ইমন। ফাইল ছবি
শিশু মোস্তাফিজুর রহমান ইমন। ফাইল ছবি

সুনামগঞ্জের ছাতকে শিশু মোস্তাফিজুর রহমান ইমনকে (৬) হত্যার দায়ে মসজিদের ইমামসহ চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রেজাউল করিম এ রায় দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামের সালেহ আহমদ, রফিকুর রহমান, জায়েদ ও উপজেলা ব্রাহ্মণজুলিয়া গ্রামের মসজিদের ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজন। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সালেহ আহমদ পলাতক।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামের সৌদিপ্রবাসী জহুর আলীর ছেলে ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান ইমনকে ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ অপহরণ করা হয়। মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পরও অপহরণকারীরা ইমনকে হত্যা করে। পরের মাসের ৮ তারিখ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শিশু ইমনের হত্যাকারী ঘাতক ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বিষের বোতল ও রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করে। পরে ইমনের মাথার খুলি ও হাতের হাড় উদ্ধার করে পুলিশ।

রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে আসামিদের কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আনিস মাহমুদ
রায় ঘোষণার পর আদালত থেকে আসামিদের কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: আনিস মাহমুদ



দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিশেষ কৌঁসুলি কিশোর কুমার কর জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি শিশু মোস্তাফিজুর রহমানকে হত্যার পর লাশ গোপন করায় ২০১ ধারায় আসামিদের প্রত্যেককে তিন বছর করে কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয়মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা, চিকিৎসকসহ ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দিয়েছেন।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম শমিউল আলম। তিনি বলেন, পলাতক আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে রায় কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী সুশীল চন্দ্র দাশ আসামিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘রায়ের বিপরীতে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। আদালতে যে সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করা হয়েছে সেগুলো মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতো ছিল না। আদালত আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই রায় ঘোষণা করেছেন।’

মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পর সিলেটের দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি ট্রাইব্যুনালে ওঠে। ছাতক থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মঞ্জুর মোর্শেদ ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।