জামায়াত নিষিদ্ধে রায় পর্যন্ত অপেক্ষা: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কি না, সে বিষয়টি জানতে রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এ–সংক্রান্ত মামলার রায় শিগগির হবে বলে আশা করা যায়। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশরের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে এ দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলার রায় যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে, ততক্ষণ আমরা কোনো কিছু করতে পারব না। জামায়াতের কোনো নিবন্ধন নেই। তবে এটা ন্যক্কারজনক যে তারা নিবন্ধিত না হয়েও জামায়াতের নামে ভোট করেছে। বিএনপির সঙ্গে একযোগে জোট করে ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হয়েছিল। কিন্তু জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত নজিবুল বশরের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘যারা অপরাধী, মানুষ খুন থেকে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা বিদেশে পলাতক আছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের আলোচনা চলছে। বিশ্বাস করি তাদের ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে চারটায় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়।

ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা
জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের ৬২ শতাংশ ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কারিগরি দিক থেকে অত্যন্ত জটিল এ সেতুর পাইল ড্রাইভিং চলাকালে সয়েল কন্ডিশনের কারণে কিছু পাইলের নতুন করে ডিজাইন করতে হয়েছে। এতে কিছু অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যহত আছে।

চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাংসদ মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এ দেশের জনসাধারণ বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। এ বিজয় ছিল খুবই প্রত্যাশিত। নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে এ রকম পূর্বাভাসই দেওয়া হয়েছিল। এই ল্যান্ড-স্লাইড বিজয়ের বহুবিধ কারণ আছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কোনো প্রস্তুতি বা কৌশল ছিল বলে মনে হয়নি। তাদের পরাজিত হওয়ার পেছনে এক আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন, মনোনয়ন–বাণিজ্য, দুর্বল প্রার্থী মনোনয়ন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তার অনিশ্চয়তা, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের নেতাদের মনোনয়ন দেওয়াসহ বেশ কিছু কারণ রয়েছে।’

নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি রেকর্ডের জন্য রাজনীতি করি না। প্রধানমন্ত্রিত্ব আমার কাছে উপভোগের কোনো বিষয় নয়। এটি একটি দায়িত্ব এবং অবশ্যই কঠিন দায়িত্ব। যখনই আপনারা এ দায়িত্ব দিয়েছেন, তখনই আমি আরও বেশি করে দায় বোধ করেছি। আমার একমাত্র লক্ষ্য এ দেশের মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী হতে পারে, তা বাস্তবায়ন করা।’

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, পরিচিতি তথ্য যাচাইয়ের জন্য গত বছর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার তালিকা সরবরাহ করলে তারা তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৩৮৪ জনকে মিয়ানমারের আধিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাকি ২ হাজার ৪৩১ জনকে নিবন্ধনকৃত পরিবারের তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে মিয়ানমার সরকার আমাদের জানিয়েছে। দুদেশের সম্মতিক্রমে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি হয়নি। রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যাচার, নির্যাতন ও নীপিড়ন বন্ধ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে হচ্ছে। আশা করা যায় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শিগগিরই রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে যথাসম্ভব দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

শুধু নিজের কোলে ঝোল টানার কাজ করি না
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা কোটালিপাড়ায় উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ বিষয়ে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। কোথায় কোন কাজ করলে বেশিসংখ্যক মানুষ উপকৃত হবে, সেদিকে চিন্তা করে কাজ করি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সমগ্র বাংলাদেশের জনগণের জন্যই আমার কাজ। শুধু নিজের কোলে ঝোল টানার কাজ আমি করি না। শুধু নিজের এলাকা নয়, সার্বিকভাবে সমগ্র বাংলাদেশের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। তবে, এটা ঠিক কোটালিপাড়া, টুঙ্গিপাড়াসহ দক্ষিণ অঞ্চল সবসময় অবহেলিত ছিল।’

চরজানাজাতের মাটি বিমান বন্দরের উপযোগী নয়
ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিমানবন্দর নির্মাণ করার মতো কোনো জায়গা কোটালিপাড়ায় নেই। এটা করতে গেলে অনেক কৃষিজমি নষ্ট হয়ে যাবে। সেটা করতেও চাই না। দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু অসুবিধাটা হলো চরজানাজাতের মাটি আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। ওইখানকার মাটির বিমানবন্দর করার মতো শক্তি নেই। আমরা অন্যান্য জায়গায়ও এভাবে পরীক্ষা করেছি। তবে বিকল্প হিসেবে রাস্তার ব্যাপক উন্নতি করে দিচ্ছি। দ্রুত সেখানে যাওয়া যাবে। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে কোটালিপাড়া-টুঙ্গিপাড়া পৌছতে পারব।’