'সরষের ভেতরের ভূত খুঁজতে হবে'

পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।  ছবি: প্রথম আলো
পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। ছবি: প্রথম আলো

‘আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, গত দুই দশকে প্রথম আলো তা ছাপিয়ে গেছে। অন্তত সাংবাদিকতা পেশায় প্রলোভিত, বশীভূত ও নিয়ন্ত্রিত না হয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব, তা প্রমাণ করেছে পাঠকনন্দিত এই পত্রিকা। পক্ষপাতদুষ্ট নয় এমন পত্রিকার কথা মনে হলেই প্রথম আলোর কথা চলে আসে। তাই প্রত্যাশাও একটু বেশি। সরকার মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণার পরও কেন তা বন্ধ হচ্ছে না, সে ব্যাপারে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। সরষের ভেতরের ভূত খুঁজে বের করতে হবে প্রথম আলোকে।’

গতকাল বুধবার কুষ্টিয়ায় প্রথম আলোর পাঠক সমাবেশে এভাবেই নিজেদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পাঠক। শহরের দিশা মিলনায়তনে আয়োজিত এই সমাবেশে শিক্ষক, গবেষক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি চাকুরে, অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। অন্তরঙ্গ পরিবেশে তাঁরা প্রথম আলোর প্রতি ভালোবাসা ও চাহিদা, অভিযোগ ও অনুযোগ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথম আলোর ২০ বছরপূর্তি ও আলোর পাঠশালা নিয়ে বানানো তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর পাঠকদের স্বাগত জানিয়ে সূচনা বক্তব্য দেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘পাঠকের ভালোবাসা নিয়ে আমরা ২০ বছর পার করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশের এক নম্বর কাগজ হিসেবে প্রথম আলোকে প্রতিষ্ঠা করা। মাত্র সাড়ে তিন বছরেই তা সম্ভব হয়েছে। গুণ ও মানে প্রতিনিয়ত ভালো করার নিরন্তর চেষ্টা চলছে। শুরু থেকেই সেরা ছাত্রবৃত্তি, অ্যাসিড–সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও আইনি সহায়তা এবং মাদককে “না” বলাসহ অনেক ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম আলোর পাঠক বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ছাপানো কাগজ ৬৬ লাখ পাঠক পড়েন। এ ছাড়া অনলাইনে ২০০টির বেশি দেশে প্রতিদিন ১০ লাখ পাঠক পড়েন।’

উন্নয়নকর্মী মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রথম আলো অনিয়ম–দুর্নীতি প্রশ্নে কাউকে ধরলে ছাড়ে না। গড়াই নদ খনন নিয়ে প্রতিবছর বরাদ্দ টাকা কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চাই।’

রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ কুষ্টিয়ার সভাপতি আলম আরা জুঁই বলেন, পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন ১০টি উৎসমুখ নিয়ে দেশে মাদক প্রবেশ করে। সরকার বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, তাহলে উৎসমুখ বন্ধ না করে পাড়া–মহল্লায় কেন অভিযান করে, সে বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখতে হবে। সরষের ভেতরের ভূত খুঁজে বের করতে হবে।

লেখক–গবেষক আবুল আহসান চৌধুরী বলেন, সাহসী সাংবাদিকতার কারণেই শুধু বাংলা ভাষাভাষী নয়, বৈশ্বিক সংবাদপত্রের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে প্রথম আলো

প্রথম আলোর পাঠক সমাবেশে প্রশ্ন করছেন এক পাঠক। গতকাল সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া শহরের দিশা টাওয়ার মিলনায়তনে।  ছবি: প্রথম আলো
প্রথম আলোর পাঠক সমাবেশে প্রশ্ন করছেন এক পাঠক। গতকাল সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া শহরের দিশা টাওয়ার মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

সংবাদকর্মী ইব্রাহিম শুভ বলেন, ‘মাদকের মতো ধর্ষণ প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমরা কোনো হারকিউলিসের সহযোগিতা চাই না। এ ব্যাপারে প্রথম আলোর সময়োপযোগী উদ্যোগ চাই।’

উন্নয়নকর্মী জামান আখতারুজ্জামান বলেন, শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদনে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবনী নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা দরকার।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে কুষ্টিয়া সরকারি সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ আজমল গণি, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক আকলিমা খাতুন, কলেজশিক্ষক প্রসেনজিৎ মণ্ডল, উন্নয়নকর্মী সৈয়দা হাবিবা, চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, ছাত্র মুছা করিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পাঠকদের বক্তব্যের জবাবে মতিউর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র রক্ষা এবং দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। নির্দলীয় স্বাধীন সাংবাদিকতা অব্যাহত রাখা হবে।’