অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির মামলায় পুলিশের দুই সদস্য গ্রেপ্তার

তিন তরুণকে অপহরণ করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগের মামলায় দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ওই দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া দুজন হলেন: গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমান।

মামুন ও মুসরাফিকুরকে গ্রেপ্তার দেখানোর তথ্য আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। তিনি বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য অপরাধ করলে তাঁদের ছাড় দেওয়া হবে না। কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা জানাতে অনুরোধ করেন তিনি। মামুন ও মুসরাফিকুরকে গতকাল বৃহস্পতিবারই প্রত্যাহার করে নিজ নিজ পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। পরে দুজনকেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ তাঁদের আদালতে পাঠানো কথা রয়েছে। অপহরণ ও মুক্তিপণের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্য। তবে তাঁরা পরস্পরের ওপর দোষ চাপিয়েছেন।

অপহরণের শিকার তিন তরুণ হলেন কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ি এলাকার রায়হান সরকার, লাবিব হোসেন ও শ্রীপুর উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকার নওশাদ ইসলাম। অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগে পুলিশের দুই সদস্যের নাম উল্লেখ করে আজ কালিয়াকৈর থানায় মামলা করেন রায়হান সরকার। এই মামলায় ৬-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

রায়হান জানান, গত বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে রাজধানীর বাণিজ্য মেলার উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা পাঁচ বন্ধু। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় শিলা-বৃষ্টি ফিলিং স্টেশনে যান গ্যাস নিতে। গ্যাস নেওয়ার সময় তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান নামে দুই বন্ধু গাড়ি থেকে নেমে পাশের দোকানে চা খেতে যান। বাকিরা গাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় দুটি গাড়ি নিয়ে সেখানে হাজির হন এএসআই মামুন ও মুসরাফিকুর। তাঁরা সাদাপোশাকে ছিলেন। মুসরাফিকুরের মাইক্রোবাসে সাদাপোশাকের আরও কয়েকজন লোক ছিলেন। রায়হানের অভিযোগ, তাঁরা রায়হানসহ তিন বন্ধুকে টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে মাইক্রোবাসে তোলেন। পরে তাঁদের টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের দেওড়া এলাকায় নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিন বন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। দাবি করা টাকা না দিলে ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। পরে বেশ কিছু সময় তাঁদের সঙ্গে টাকা নিয়ে দেনদরবার হয়। একপর্যায়ে দুই এএসআই ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান।

অপহরণের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া দুই বন্ধু তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল মুঠোফোনে পুরো ঘটনা কালিয়াকৈর থানা-পুলিশ এবং অপহৃত তিনজনের পরিবারের সদস্যদের জানান। তরিবুল্লাহ বলেন, তাঁদের অভিযোগ জানার পর কালিয়াকৈর থানা থেকে একটি দলকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তারা প্রাথমিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে নিশ্চিত হয়, এএসআই মামুন ও মুসরাফিকুর এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত। পরে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন মজুমদার এএসআই মামুনকে ফোন করলে তিনি তিন তরুণকে তুলে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। দুই থানার সহযোগিতায় অপহৃত তিন তরুণকে বুধবার রাত আটটার দিকে উদ্ধার করা হয়।