'সূত্রহীন' মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি পিবিআইর

রাসেল হত্যা মামলায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
রাসেল হত্যা মামলায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

কদমতলী এলাকার সূত্রহীন (ক্লু-লেস) রাসেল হত্যা মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন করার দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা। হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ রোববার এ তথ্য প্রকাশ করে পিবিআই। পিবিআই জানিয়েছে পাওনা টাকা চাওয়ার ঘটনায় মনমালিন্যের জেরে রাসেলকে হত্যা করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন সজল ওরফে পিচ্চি সজল (২২) ও মো. হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু (২৫)। তাঁদের কাছ থেকে ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ২টি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

পিবিআই জানায়, রাসেল গ্রামের বাড়িতে কৃষিকাজ করতেন। তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় চাকরির সন্ধানে আসেন। পরের মাসের একদিন রাত ১১টার দিকে রাসেলের মা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংবাদ পান, রাসেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে মারা গেছেন। তখন রাসেলের মা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ডান পাঁজরে পিঠের দিকে ব্যান্ডেজ অবস্থায় তাঁর ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। স্থানীয়ভাবে জানতে পারেন, কদমতলীর বড়ইতলা মোড়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি ছুরি দিয়ে তাঁর ছেলেকে আঘাত করেন। পরে তাঁর ছেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। কিন্তু কী কারণে এবং কারা তাঁর ছেলেকে হত্যা করে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাননি তিনি।

এ ঘটনায় রাসেলের মা রাশিলা বেগম (৪০) অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা করেন।

পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, কদমতলী থানা পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে কে বা কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। তখন বাদী না রাজি দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পিবিআইকে তদন্ত ভার দেয়। তখন পিবিআই তদন্ত শুরু করে। আদালতের আদেশে পিবিআইয়ের ঢাকা (উত্তর) উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আল-আমিন শেখ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। তিনি মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ক্লু-লেস রাসেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য রাসেলের গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা থানা এলাকাসহ ঢাকা মহানগরীর কদমতলী এলাকায় তদন্ত করেন।

পরে মামলার নিয়োজিত গুপ্তচর ও আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি দল গতকাল শনিবার সকালে প্রধান আসামি সজল ওরফে পিচ্চি সজলকে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে আটক করে এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রাসেল হত্যা মামলার রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবুকে শ্যামপুর থানার হাজীগেট ব্যাংক কলোনি থেকে আটক করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ২টি চাকু উদ্ধার করা হয়।

আটককৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, সজল নিহত রাসেলের একই গ্রামে বিয়ে করেন। সেই সুবাদে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সজল ঢাকার কদমতলী এলাকায় ভাড়া থাকতেন। এ সময় রাসেলের সঙ্গে সজলের সখ্য গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে রাসেলকে ঢাকায় টায়ারের ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সজল ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় আসার পর চাকরি দেওয়ার কথা বলেও চাকরি না দেওয়ায় তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে সজলের পরিচিত পিংকি ও পারভেজ কদমতলী ও শ্যামপুর থানা এলাকার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। পিংকি ও পারভেজের মধ্যে এলাকায় মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ওই বিরোধের জের ধরে পিংকি পারভেজকে খুন করার জন্য বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু ও সজলকে ভাড়া করেন।

তাঁরা পারভেজকে খুন করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে একত্রিত হন। সেখানে রাসেলকেও সজল কৌশলে নিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে সজল ও বাবু অন্যান্যদের নিয়ে ইয়াবা সেবন শুরু করেন। তাঁদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াবা সেবন শেষে সজল ও বাবু তাঁদের কোমরে থাকা চাকু দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে পারভেজ ও রাসেলকে আঘাত করে পালিয়ে যান। গুরুতর রক্তাক্ত পারভেজ ও রাসেলের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁদের উদ্ধার করে এবং চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় রাসেল মারা যান।

 ঢাকা উত্তরের বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, রাসেল ও পারভেজকে যখন ছুরি মারা হয় তখন রাতের অন্ধকারে পারভেজ কাউকে চিনতে পারেননি। এদের সবাইকে চিনতেন রাসেল। তাই রাসেল মারা যাওয়ায় হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা ক্লুলেস হয়ে পড়ে।