বিএনপির উপজেলা চেয়ারম্যানরা কী করবেন?

রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া না-নেওয়া নিয়ে তৃণমূল বিএনপিতে ধোঁয়াশা রয়েছে। গত মাসে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবে কি না, সেটা হলে বহিষ্কার করা হবে কি না—এসব বিষয়ে তৃণমূল পর্যায়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা যায়নি। দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে অনেকে একমত হলেও জাতীয় নির্বাচনের পরপরই উপজেলা নির্বাচনসহ সাংগঠনিক ব্যাপারে দল থেকে সরাসরি নির্দেশনা আশা করেছিল তৃণমূল বিএনপি।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ‘ডাকাতি’ ও ‘প্রহসনের’ নির্বাচন বলে আসছে বিএনপি। আর এই নির্বাচনের ‘অভিজ্ঞতা’ থেকে এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। গত ২৪ জানুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনে তাঁরা অংশ নেবেন না।

২০১৪ সালে সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ১৯-দলীয় জোট নিয়ে নির্বাচন করে। যদিও সেবারের ভোট সরাসরি দলীয় প্রতীকে হয়নি। বিএনপির কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের ১৭৬ জন নেতা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদে এই জোটের প্রায় ৩০০ জন নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম দুই ধাপেই বিএনপি-জামায়াতের ১১৯ জন নির্বাচিত হন। প্রথম দুই ধাপে বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চেয়ে এগিয়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তী তিন ধাপে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যায়। অবশ্য বিএনপি বলছে, শেষ তিন ধাপে ক্ষমতাসীনেরা কারচুপি করে জিতেছে।

বিএনপির বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের চিন্তা সবচেয়ে বেশি। তাঁদের অনেকেই ভোট করতে চান। কিন্তু দল থেকে তাঁদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসছে না।

এ বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পাঁচটি ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ভোট হবে ১১ মার্চ। এবারের নির্বাচনে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাম জোটও অংশ নিচ্ছে না। ২০১৪ সালে সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন হয়। ছয়টি ধাপের সে নির্বাচনে শুরুর দিকগুলোর নির্বাচনে বিএনপির অনেক প্রার্থী জয়লাভ করেন। সেই চেয়ারম্যানদের অনেকে এবং বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা বলছেন, উপজেলার ব্যাপারে তারা গণমাধ্যম থেকেই জেনেছেন। দল থেকে সরাসরি কোনো নির্দেশনা পাননি।

রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত চিঠিপত্র দিয়ে জানানো হয় না বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা গণমাধ্যমে এসেছে। নির্দেশনা তো এভাবেই আসে।’ তিনি বলেন, ৩০ তারিখের নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। মানুষ ভোট দিতে না পারলে, সেই প্রহসনের মধ্যে নির্বাচন করে লাভ নেই।
তবে ব্যক্তিস্বাধীনতা সবার আছে, উল্লেখ করে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, কেউ চাইলে নির্বাচন করতে পারেন। কেউ যদি স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করেন, তাহলে দল থেকে পদত্যাগ করে করতে পারেন। তখন তো দলের পরিচয় রাখার দরকার হয় না। পদত্যাগ করে নির্বাচন করলে তো বহিষ্কারের প্রশ্ন আসবে না।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। গণমাধ্যম থেকে আমরা জেনেছি। স্বতন্ত্রভাবে কেউ নির্বাচন করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারেও কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা পাইনি।’ তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পর প্রার্থীরাই এখন সাহস করছেন না নির্বাচন করার।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দ্বিধায় থাকার কথা বললেন সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে এখনো নির্দেশনা আসে নাই। উপজেলা নির্বাচনে দল যাবে না, এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। তারাই বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ বিএনপির এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, এ সরকারের অধীনে সব নির্বাচন একই রকম হবে।

তবে ইশতিয়াক আহমেদ জানান, ‘স্থানীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দরকার। আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হব কি না, বা দল কী করবে, পদ ছেড়ে দিয়ে হবে কি না—এ বিষয়ে কোনো ধারণা নেই। একটা অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।’
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। মির্জা ফখরুলের সঙ্গে এ বিষয়ে তিনি কথা বলবেন। তিনি বলেন, ‘দল থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। মহাসচিব এলে আমি তাঁর কাছে জানতে চাইব, আমরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করব কি না।’ আতাউর রহমান নিজেকে সারা দেশের উপজেলা পরিষদ ফাউন্ডেশনের সভাপতি জানিয়ে বলেন, অনেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাইছেন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে। তিনি আরও জানান, কেউ কেউ পদত্যাগ করতেও প্রস্তুত উপজেলা নির্বাচন করার জন্য।

মাঠপর্যায়ে দলকে চাঙা রাখতে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার অনুমতি দেওয়া উচিত, উল্লেখ করে মানিকগঞ্জের এই উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপির কখনোই নির্বাচনে আসা উচিত হবে না। তবে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে চাঙা রাখার জন্য স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে বাধা হওয়া উচিত না। এতে স্থানীয় পর্যায়ে দল শক্ত থাকবে। মামলা-হামলা ভয় নিয়ে তো সব সময় থাকা যাবে না। ভয় কাটাতে হবে।’

উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে পারত বলে মনে করছেন চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মামুনও। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে অংশ নিলে মাঠের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় থাকতেন। উপজেলার প্রেক্ষাপট জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে ভিন্ন। এখানে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে একেক দলের অনেক প্রার্থী হয়। নির্বাচন হলে এখানে একটা শক্ত সমর্থন তৈরি হয়।