চার দিনের ইজতেমা ছয় দিনে গড়াবে!

১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেছিল সরকার। কথা ছিল প্রথম দুদিন এক পক্ষ এবং পরের দুদিন অন্য পক্ষ এর ব্যবস্থাপনায় থাকবে। কিন্তু কোনো পক্ষই এই সিদ্ধান্ত মানছে না। নিজেদের মতো করে তারা তিন দিনের ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেছে। এমনকি আখেরি মোনাজাতও দুই পক্ষ আলাদা করার ঘোষণা দিয়েছে।

ইজতেমার তারিখের এই গরমিলের বিষয় সামনে আসে রোববার বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) থেকে পাঠানো একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পর। সংগঠনটি তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ কান্দলভীর বিরোধী পক্ষকে সমর্থন করছে। বেফাকের মজলিশে শ‌ুরার অধিবেশনের পর পাঠানো এই বিজ্ঞপ্তিতে তারা ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা সফল করার আহ্বান জানিয়েছে। অথচ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাদবিরোধীরা ইজতেমার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছেন ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি। সাদপন্থীরা এমন ঘোষণাকে বিভ্রান্তিকর বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তাঁদের ইজতেমাও তৃতীয় দিনে গড়াবে বলে জানানো হয়েছে। অর্থাৎ ১৭, ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি—এই তিন দিন তাঁরা ইজতেমা করবেন।

এ বিষয়ে সাদবিরোধী মুরুব্বি ও ভিক্টোরিয়া পার্ক জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আমানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিই তাঁরা ইজতেমা করবেন। কিন্তু এই দুদিনকে সফল করার জন্য ১৪ তারিখ থেকে তাঁদের ‘আমল’ শুরু হবে। অন্যান্য বছরও এটা হয়। ১৬ তারিখ সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তাঁরা তাঁদের ইজতেমা শেষ করবেন।

সাদপন্থী শ‌ুরা সদস্য ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের পরও বেফাকের এমন ঘোষণা দুঃখজনক। এটা বিভ্রান্তি ছড়াবে। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাঁদের ইজতেমা শেষ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে।


দুই পক্ষের এমন অবস্থান এবং বেফাকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, চার দিনের ইজতেমার ব্যবস্থাপনাকে শুধু দুই পক্ষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। বেফাকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ইজতেমা বা তাবলিগ জামাতের সঙ্গে বেফাকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা একটি পক্ষকে সমর্থন করছে। তাই বলে এমন তারিখ ঘোষণা দিতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

বাংলাদেশে তাবলিগের বিভেদ প্রকাশ্য হয় গত বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমা থেকে। বিরোধিতার কারণে তখন বাংলাদেশে এসেও ইজতেমায় অংশ নিতে পারেননি তাবলিগের আমির ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভী। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যেই উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। কওমি মাদ্রাসার আলেমদের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের সমর্থকেরা সাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর সাদের পক্ষে আছে তাবলিগ জামাতের নিয়মিত নেতাদের একটি অংশ। ধর্ম নিয়ে সাদের কিছু বক্তব্যের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়।

টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাবলিগের দুই পক্ষ গত বছরের ১ ডিসেম্বর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ওই দিন ময়দানেই সাদের অনুসারী এক মুসল্লি নিহত হন। গুরুতর আহত আরেক মুসল্লি (সাদের অনুসারী) এক মাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২ জানুয়ারি মারা যান। দুই পক্ষের এমন অবস্থানের পর সরকারের সঙ্গে কয়েক দফায় সভা শেষে ২৪ জানুয়ারি ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ হয়। ওই দিন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তাবলিগের দুই পক্ষের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেন।