একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে হাসপাতাল

১০ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও হাসপাতালে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। এর মধ্যে দুজন ছুটিতে থাকায় একজন চিকিৎসা কর্মকর্তাকেই রোগীদের সামলাতে হচ্ছিল। দৈনিক গড়ে ২৫০ জন রোগী আসে হাসপাতালটিতে। চিকিৎসক না পেয়ে রোগীরা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের সেবা নিচ্ছিল।

এই চিত্র ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। গতকাল রোববার হাসপাতালটিতে গিয়ে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তার দেখা মিলেছে। মো. সাইফুল ইসলাম নামের ওই কর্মকর্তাকে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসা রোগীরা এক্স-রে সেবার মতো প্রয়োজনীয় সেবাও পাচ্ছে না।

ফেনীর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ৩১ শয্যার দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ রয়েছে ১০ টি। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ সেখানে তিনজন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একটি বিভাগীয় পরীক্ষায় অংশ নিতে ঢাকায় গেছেন। মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট অর্জিত ছুটিতে রয়েছেন। এ কারণে এখন চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব কাজ দেখতে হচ্ছে।

গতকাল বেলা ১১টায় ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ সারি। চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের পাশাপাশি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা রোগীদের সেবা দিচ্ছিলেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না পেয়ে অনেক রোগী ফেনী সদর হাসপাতালে যাবেন বলে জানালেন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে জরুরি বিভাগে আসেন সোলতান আহম্মদ (৫২) ও তাঁর মেয়ে সোনিয়া (১৪)। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক্স-রে যন্ত্র নষ্ট থাকায় রোগনির্ণয়ের জন্য তাঁদের বাইরে পাঠান চিকিৎসকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টেকনিশিয়ানের অভাবে একটি নতুন ও একটি পুরোনোসহ দুটি এক্স-রে যন্ত্র পড়ে আছে হাসপাতালে। জরুরি রোগীদের বাইরে গিয়ে এক্স-রে করতে হয়। গত দুই বছর ল্যাব টেকনিশিয়ানের অভাবে প্যাথলজি বিভাগও বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকটও রয়েছে। ফলে এক্স-রে বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগ থেকেও অচল। অ্যাম্বুলেন্সের চালক নেই। অ্যাম্বুলেন্স চলে একজন এমএলএসএস দিয়ে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, জুনিয়ার মেকানিকের পদও শূন্য। চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি আগের রাতেও (শনিবার) ডিউটি করেছেন। অন্য কোনো চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় তাঁকে দিনেও ডিউটি করতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জরুরি কাজে ঢাকা গেছেন। মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট অর্জিত ছুটিতে রয়েছেন। তবে আটজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পালা করে রোগী দেখছেন।

চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ৩১ শয্যার হাসপাতালে গড়ে ভর্তি রোগী থাকে ২০ জন। এদের মধ্যে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্তরাই রোগী। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন রোগী আসে।

সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক–সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে লিখিত ও মৌখিকভাবে অবহিত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকসহ জনবল পদায়নের জন্য জানানো হয়েছে।