ময়লা উৎসবে ডাস্টবিনের নাম 'গেস্টরুম নির্যাতন...'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখে প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরুতে যে পরিবেশ তাঁরা পান, তা সেই স্বপ্নের ভিত্তিমূলে রীতিমতো আঘাত হানে। ছাত্রাবাসের অতিথিকক্ষে নির্যাতন আর ক্যানটিনের নিম্নমানের খাবারের সঙ্গে থাকে নিতান্ত অনিচ্ছায় ‘বড় ভাই’দের কথায় ওঠবসের বাধ্যবাধকতা। জবরদস্তিমূলক এ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন চান শিক্ষার্থীরা। আর সেই চাওয়া থেকেই অভিনব এক প্রতীকী প্রতিবাদ নিয়ে হাজির হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গলদ এবং নানান অনিয়মকে ব্যঙ্গ করে কয়েকটি ডাস্টবিনকে সেগুলোর নামে নামকরণ করে তাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাস্তাঘাটে জমে থাকা ময়লা ফেলছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই একদল শিক্ষার্থী। সারা দিনে ডাস্টবিনে জমা হওয়া ময়লা পোড়ানো হচ্ছে রাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংগত কর্মকাণ্ডগুলোকে ময়লার সঙ্গে তুলনা করে এসবের অবসানে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চান তাঁরা। এ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ময়লা উৎসব’। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মকে ‘ইতিহাসের ডাস্টবিনে’ ভস্মীভূত করতে চান তাঁরা।

উৎসবের উদ্যোক্তারা বলছেন, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ময়লা জমেছে। এ ময়লা পরিষ্কারের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগগুলোকেও করে রাখা হয়েছে রুদ্ধ। তাই বলে ময়লার স্তূপকে তো নির্বিবাদে বাড়তে দেওয়া যায় না। এমন ভাবনা থেকেই তাঁরা এ প্রতীকী প্রতিবাদের উদ্যোগ নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে নবজাগরণ সৃষ্টির স্বপ্ন তাঁদের। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সঞ্জীব চত্বরে শুরু হয়েছে ‘ময়লা উৎসব’। চলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

ডাস্টবিনগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব অনিয়মের নামে তাঁরা নামকরণ করেছেন, সেগুলো হলো ‘গেস্টরুম নির্যাতন’, ‘নারী নিপীড়ন’, ‘হেলমেট বাহিনী’, ‘ম্যানার শেখানো’, ‘শিক্ষককে হেনস্তা’, ‘ক্যাম্পাসে টিয়ারশেল’, ‘ডালের নামে পানি’, ‘রড-চাপাতি-হাতুড়ি’, ‘ভাইদের প্রটোকল’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আদনান আজিজ, মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নাজমুল ইসলাম ও পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মাঈনউদ্দিন আহমেদ অভিনব এ প্রতিবাদের মূল উদ্যোক্তা। তাঁদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্র মেঘমল্লার বসু, কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের মীম আরাফাত এবং চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী জাহিদ জামিল ও সাইনুর রহমান।

আদনান আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, টিএসসিতে শুরু হলেও এই উৎসবকে তাঁরা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চান, যাতে আর কোথাও কোনো শিক্ষককে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব হেনস্তা করতে না পারে, কোনো ছাত্রকে গেস্টরুম নির্যাতনের শিকার হতে না হয়।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এই কর্মসূচির বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এখানে প্রতিবাদের উদ্ভাবনী শক্তি দেখা যাচ্ছে, যা তরুণদের মধ্যেই আছে। আর যে অনিয়মের কথাগুলো ওই সব শিক্ষার্থীরা বলছেন সেগুলো তো সাজানো নয়, বাস্তব সত্য। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।