জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এখনো মামলা হয়নি

>
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

* জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি
* যুদ্ধাপরাধের জন্য দলটির বিচার করতে দরকার আইনের সংশোধন
* জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে একটি আপিল বিচারাধীন

যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলিরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের জন্য দলটির বিচার করতে আইন সংশোধন করতে হবে। তবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে একটি আপিল বিচারাধীন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত বছর দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে।

জাতীয় সংসদে ৬ ফেব্রুয়ারি এক সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলার রায় যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে, ততক্ষণ আমরা কোনো কিছু করতে পারব না।’

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের এই মামলা হচ্ছে নিবন্ধন বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল, যা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। তিনি বলেন, যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকে না, তারা দল হিসেবে স্বীকৃতি পায় না। দল হিসেবে যদি স্বীকৃতি না পায়, তাহলে তারা নিষিদ্ধ।

তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার অর্থ জামায়াত নির্বাচন করতে পারবে না। এই মামলার সঙ্গে জামায়াত নিষিদ্ধকরণের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, দেশে অনেক দল আছে, যাদের ইসির দেওয়া নিবন্ধন নেই, অথচ রাজনীতি করছে।

শাহরিয়ার কবিরের মতে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হলে মামলা করতে হবে। একটি হতে পারে একাত্তরে গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, আরেকটি হতে পারে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাম্প্রতিক কালে তাদের যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে বিদ্যমান আদালতে। দুই ক্ষেত্রে বাদী হতে হবে সরকারকে।

২০০৯ সালের এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন। রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিভ টু আপিল ও আপিল করে দলটি। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, আপিল শুনানির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আইন সংশোধনের অপেক্ষায়
জামায়াতের বিরুদ্ধে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সাত ধরনের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ এনে তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ে প্রতিবেদন দেয়।

এরপর পাঁচ বছর পার হয়েছে, জামায়াতের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান গত ১ জানুয়ারি এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বিচার কেন শুরু হচ্ছে না, তা আমাদেরও প্রশ্ন। ২০১৪ সালে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। পাঁচ বছর ধরে কালক্ষেপণ হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে সংগঠনের বিচার ও শাস্তির বিধান নেই। তাই আইন সংশোধন করতে হবে। আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ‘ব্যক্তি’ শব্দের সঙ্গে ‘সংগঠন’, আরেকটি ধারায় ‘দায়’ শব্দের পরে ‘সাংগঠনের দায়’ ও অপর ধারায় ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি’র সঙ্গে ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠন’ শব্দ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। এসব শব্দ যুক্ত করা হলে একাত্তরের ভূমিকার জন্য দল হিসেবে জামায়াতের বিচার সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে বলেছেন, আইনের সংশোধনী তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য আবার ওই সংশোধনী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।