ইডেনের সাবেক অধ্যক্ষ হত্যায় জড়িত একাধিক ব্যক্তি

মাহফুজা চৌধুরী
মাহফুজা চৌধুরী

কারও একার পক্ষে ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীনকে হত্যা করা সম্ভব নয়। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। একাধিক ব্যক্তি তাঁকে হত্যা করে থাকতে পারেন। মাহফুজা চৌধুরীর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে এ কথা জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ।

আজ সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মাহফুজা চৌধুরীকে তাঁর মুখ চেপে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর ঠোঁট, মুখ ও আঙুলে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তাঁর হাতের একটি আঙুল ভাঙা ছিল। মাহফুজা চৌধুরীকে একজনের পক্ষে হত্যা করা সম্ভব নয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে শ্বাস রোধ করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। একাধিক ব্যক্তি এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

মাহফুজা চৌধুরী পারভীন হত্যার ঘটনায় আজ সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন তাঁর স্বামী ইসমত কাদির গামা। মামলায় তাঁর বাড়ির দুই গৃহকর্মীসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তিনজনকে ধরতে তৎপরতা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এর আগে সকালে মারুফ হোসেন সরদার জানান, এ হত্যার ঘটনায় তাঁর দুই গৃহকর্মী স্বপ্না ও রেশমাকে আটকের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে।

তদন্তের স্বার্থে এখনই তৃতীয় ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি। ওই ব্যক্তি স্বপ্না ও রেশমাকে ওই বাসায় কাজে দিয়েছিলেন।

মারুফ হোসের সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সন্দেহের তির ওই দুই গৃহকর্মীর দিকেই। ওই ঘটনার পর বিকেল পাঁচটার দিকে তারা পালিয়ে যায়। এরপরই তাদের ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। গতকাল সারা রাতই অভিযান চলে। আশা করছি দ্রুত তাদের আটক করা সম্ভব হবে।’ পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে বলে জানান তিনি।

পলাতক দুই গৃহকর্মী স্বপ্না ও রেশমার বয়স আনুমানিক ৩৬ ও ৩০ বছর। স্বপ্নার বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও রেশমার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ দুজনকে ধরতে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপরতা চালাচ্ছে।

গতকাল রোববার বিকেলে নিজের বাসায় খুন হন মাহফুজা চৌধুরী পারভীন। এলিফ্যান্ট রোডের সুকন্যা টাওয়ারের বাসায় থাকতেন তিনি। এ ঘটনার পর তাঁর বাসার দুই গৃহকর্মী স্বপ্না ও রেশমা পালিয়ে যান। পুলিশ খুনি হিসেবে প্রাথমিকভাবে তাঁদের সন্দেহ করছে।

মাহফুজা চৌধুরীর স্বামী ইসমত কাদির গামা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। মাহফুজা চৌধুরী ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। সুকন্যা টাওয়ারের ১৫ ও ১৬ তলায় দুটি ফ্ল্যাটে (ডুপ্লেক্স) এই দম্পতির বহুদিনের সংসার। ওপরের অংশটিতে তাঁরা থাকেন। নিচতলায় রান্নাঘর, গৃহকর্মীদের আবাস। তাঁদের দুই ছেলের একজন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক, আরেকজন ব্যাংকে চাকরি করেন বলে জানান স্বজনেরা। তাঁরা এখানে থাকেন না। বাড়িতে তিনজন গৃহকর্মী ছিলেন।