পুলিশের কাছে দিয়াজের মা

ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে কর্মচারী সমিতির ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে। প্রথম আলো ফাইল ছবি।
ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে কর্মচারী সমিতির ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে। প্রথম আলো ফাইল ছবি।
>

• দিয়াজ ইরফানের মা কদিন আগে মাঠে লুটিয়ে বিলাপ করেছিলেন
• মা এবার গেছেন পুলিশের কাছে
• মায়ের অভিযোগ, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে

মাঠে লুটিয়ে বিলাপ করেছিলেন কদিন আগে। এবার গেলেন পুলিশের কাছে। তিনি দিয়াজ ইরফানের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। গতকাল সোমবার দুপুরে দেখা করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান ও নগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে। তাঁদের কাছে তিনি ছেলে হত্যার আসামীদের ধরার আর্তি জানান।

জাহেদা আমিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আটক করা হচ্ছে না। বিষয়টি জানাতেই পুলিশ কমিশনার ও বিশেষ পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেছি। তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন। কমিশনার মহোদয় বলেছেন, মামলাটি সিআইডির হাতে। তবে তাঁর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করবেন। অন্যদিকে নাজমুল করিম মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে দ্রুত আসামীদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান বলেন, ‘যাঁরা এ মামলার আসামি তাঁরা ক্ষমতার খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। সে কারণে খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ভুল করলে পার পাওয়া যাবে না। প্রমাণগুলো সঠিকভাবে না থাকলে সেখানে হাত দিতে পারব না। ভাসা ভাসা জেনে ক্ষমতাধর কাউকে ধরে আনাটা বুদ্ধির কাজ হবে না।’

নগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। জাহেদা আমিনের উপস্থিতিতে সিআইডিকে মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছি। এ ছাড়া নগর এলাকায় সিআইডির কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে যথাযতভাবে তা করা হবে।’

এর আগে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে লুটিয়ে পড়ে প্রতিবাদ জানান জাহেদা আমিন চৌধুরী। জাহেদা আমিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। পরে মাঠে লুটিয়ে পড়ে স্রষ্টার কাছে বিচার চান তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সেসময় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে একাধিকবার কর্মসূচি পালন করেছেন জাহেদা আমিন। গত বছরের ৩০ অক্টোবর সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনশন পালন করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকার ভাড়া বাসা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দিয়াজের মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয় ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর। দুই দিন পর পুলিশ জানায়, তাঁকে হত্যা করার আলামত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মেলেনি। এরপর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে ওই বছরের ২৪ নভেম্বর জাহেদা আমিন বাদী হয়ে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু, সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। পরে একই বছরের ৬ ডিসেম্বর লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দিয়াজকে শ্বাস রোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে।