গোপনে নির্বাচনে বিএনপি নেতা

>

• দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সিদ্ধান্ত নেই
• তারপরও চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি
• গোপনীয়তা রক্ষা করে তিনি মনোনয়নপত্র তোলেন ও জমা দেন

দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও স্বতন্ত্র হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডি এম জিয়াউর রহমান। গোপনীয়তা রক্ষা করে তিনি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও দাখিল করেন।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনিল কুমার সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সদলবলে উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বিএনপির জেলার নেতারা বলেছেন, জিয়াউর রহমানের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত, দলীয় নয়। তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত কেন্দ্র থেকে নেওয়া হবে। প্রথম ধাপে আগামী ১০ মার্চ বাগমারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানা যায়, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গতকাল সোমবার চেয়ারম্যান পদে তিনজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের জেলা শাখার সহসভাপতি অনিল কুমার সরকার, বিএনপির উপজেলা শাখার সভাপতি ডি এম জিয়াউর রহমান ও যুবলীগের সমর্থক দাবিদার বাবুল হোসেন।

এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনিল কুমার সরকার গতকাল দুপুরে শতাধিক দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তরে আসেন। এ সময় দলের ২০-২৫ জন নেতা-কর্মী নিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। অথচ আচরণবিধিতে বলা হয়েছে পাঁচজনের অধিক ব্যক্তি নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে না। তাঁর অনুসারীরা ফেসবুকের লাইভের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র দাখিলের ছবি প্রচার করেন। অনেকে ফেসবুকে ছবিও পোস্ট করেন। এর আগে সকালে তিনি উপজেলার চানপাড়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন ও সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্প অর্পণ করেন। এখানে উপজেলা ও ইউনিয়নের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আচরণবিধি অমান্য করে ২০-২৫ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল প্রসঙ্গে অনিল কুমার সরকার বলেন, তিনি বারণ করা সত্ত্বেও অনেকে অতি উৎসাহী হয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও বিব্রত হয়েছেন।

অপরদিকে বিএনপির উপজেলা শাখার সভাপতি জিয়াউর রহমান আগের দিন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে মনোনয়নপত্র তুলে গতকাল বিকেলে তিনি সেটি দাখিল করেন। গোপনীয়তা রক্ষা করে মনোনয়নপত্র দাখিল ও উত্তোলন করা হয়। তাঁর সঙ্গে উপজেলা বা জেলা বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা-কর্মী ছিলেন না। দলীয় নেতা-কর্মী এবং এলাকার লোকজনও বিষয়টি জানেন না। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে এর আগে ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য দলীয় কোনো প্রার্থীকেও মনোনয়ন দেয়নি দলটি।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমানের মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়টি তিনি জানেন না। নির্বাচনে অংশ নিলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর পদ উল্লেখ করে কেন্দ্রে চিঠি দেওয়া হবে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করায় জিয়াউর রহমানকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলটি।

এদিকে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি।’ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে বলেন, ‘দল চাপাচাপি করলে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সমস্যা নেই।’ গতকাল তাঁর পক্ষে দুজন কর্মী গিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী অনিল কুমার সরকার বিএনপির উপজেলা সভাপতির মনোনয়নপত্র দাখিল প্রসঙ্গে বলেন, তিনি তো দলীয় প্রতীক (ধানের শীষ) পাবেন না। নির্বাচনে যে কেউ অংশ নিতে পারেন, এতে কোনো আপত্তি নেই।