ছাত্রলীগের 'আশ্বাসে' ভরসা নেই অন্যদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সফল করতে শর্তহীন সহযোগিতা ও উদারতা দেখানোর আশ্বাস দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ। তাদের এ আশ্বাসে অনাস্থা জানিয়েছে বিরোধী সব ছাত্রসংগঠন। বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের এ আশ্বাস ‘লোকদেখানো’।

গতকাল সোমবার ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব ছাত্রসংগঠনের প্রতি শর্তহীন সহযোগিতার আশ্বাস জানিয়ে ডাকসু নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ছাত্রলীগ নেতৃত্বাধীন জোটের আশ্বাসে আস্থা রাখতে না পারলেও একে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু তারা এ ধরনের একটি আশ্বাস দিয়েছে, আমরা তাদের স্বাগত জানাই। তবে তাদের সহাবস্থান ও সহযোগিতার আশ্বাস সাধারণত কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। কয়েক দিন আগেও ক্যাম্পাসে আমাদের এক নেতার ওপর তাঁরা হামলা চালিয়েছে। তাই এ ধরনের আশ্বাসে আস্থা রাখা যাচ্ছে না।’

বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো বলছে, ছাত্রলীগ ও তাদের মিত্রদের এ আশ্বাস ‘লোকদেখানো’। পাঁচটি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রলীগ তাদের গত ১০ বছরের ছাত্রস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতে এ ধরনের লোকদেখানো আশ্বাস দিচ্ছে। হলগুলোয় তাদের দখলদারি এখনো বজায় আছে। গণরুম ও গেস্টরুম সংস্কৃতিও বহাল আছে। এ অবস্থায় এই ধরনের আশ্বাস স্রেফ লোকদেখানো বুলি ছাড়া কিছু নয়।’

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শর্তহীন সহযোগিতার এ আশ্বাস স্রেফ লোকদেখানো। যদি তা না হতো, তাহলে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলোর সঙ্গে তারাও একমত পোষণ করত। আমরা হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র এবং নির্বাচনী প্রচারণায় ক্লাস ক্যাম্পেইনের সুযোগ দাবি করেছি। দুটি দাবিই যৌক্তিক। কিন্তু ছাত্রলীগই এর বিরোধিতা করেছে। ফলে, তাদের এসব কথা আসলে বলার জন্য বলা। এতে আস্থা রাখারও কিছু নেই।’

গতকাল সকালে দীর্ঘ ২৮ বছর পর হতে যাওয়া ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ডাকসুর সংশোধিত গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি মেনে হবে নির্বাচন। বেশ কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করার দাবি থাকলেও ভোটকেন্দ্র হচ্ছে হলেই।

তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেছে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে ছাত্রদল, বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর দুই মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র ও সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।