সবাই মিলে সবার ঢাকা

রাজধানীর একটি হোটেলে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর একটি হোটেলে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো

সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ার এই তিন বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। সবাই মিলে সবার ঢাকা- এই স্লোগানে সবাইকে নিয়ে এই তিন বিশেষ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গুলশান-২ নম্বরের লেকশোর হোটেলে তিনি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এতে তাঁর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান উপস্থিত ছিলেন।

তবে বর্তমান বাস্তবতায় এবং দায়িত্ব পালনে আতিকুল ইসলাম যেটুকু সময় পাবেন তার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কোনো প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে অতীতে ঢাকা উত্তর সিটিতে গৃহীত প্রকল্প, চলমান কাজ এবং নৈমিত্তিক নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনে কাজ করতে পারলেই নগরবাসী খুশি হবেন বলে মন্তব্য করেছেন স্থপতি ইকবাল হাবিব ও লেখক গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

আতিকুল ইসলাম তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘ইশতেহারের বিষয়গুলো বলা সহজ হলেও বাস্তবায়ন করা কঠিন। আমি একনিষ্ঠ এবং আত্মবিশ্বাসী। নির্বাচনে বিজয়ী হলে, এই লক্ষ্য অর্জনে আমার সাধ্যের পুরোটা ঢেলে দেব।’ গতিময়, নিরাপদ, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক ঢাকা শহর বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বশীল সব প্রতিষ্ঠানের কাছে তিনি একান্তভাবে সহযোগিতা কামনা করেন।

ইশতেহার ঘোষণার একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এক বছরের মধ্যে অঙ্গীকারগুলোর কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই পরিকল্পনা শুধু আমার সময়কালের জন্য না। ভবিষ্যতে যুগ যুগ ধরে যাঁরা এই শহরে বসবাস করবেন, তাদের মঙ্গলের জন্য। দায়িত্বে আমি এক বছর বা এক দিন থাকি, লক্ষ্য থাকতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা কী রেখে যেতে চাই?’

নিজের ইশতেহারকে ত্রিমুখী ইশতেহার উল্লেখ করে এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ঢাকা শহরকে সুস্থ, সচল ও অত্যাধুনিক ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলতে নাগরিকদের সামান্য সচেতনতা ও আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

সুস্থ ঢাকা গড়তে তিনি শহরের রাস্তা, খোলা জায়গা ও ভবনের ছাদে বনায়ন, এলাকাভিত্তিক পার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণ, ভেজালমুক্ত কাঁচাবাজার, জলাশয়-জলপথের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, প্রয়োজন মাফিক গণশৌচাগার, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, মশক নিধনে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তরুণদের অনুপ্রেরণা দান, অপরাধ ও মাদকের বিস্তার রোধে জনসচেতনতা তৈরি ও সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করতে চান।

ঢাকাকে সচল করতে পথচারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিবান্ধব ফুটপাত, পদচারী-সেতু, আন্ডারপাস নির্মাণ, সড়ক সংস্কার ও নিরাপদ রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করা, সাইকেল ও মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির ট্রাফিক সিস্টেম, অ্যাপস–নির্ভর ও ই-টিকিটিং সুবিধাসংবলিত ডিজিটাল পরিবহন ব্যবস্থা, আধুনিক বাস-স্টপ ও নগর চলাচলবান্ধব বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণ, এলাকাভিত্তিক বহুতল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং ব্যবস্থা এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে বর্ষাকালীন জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আতিকুল ইসলাম। ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় বয়স্ক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখার কথাও রয়েছে।

ঢাকাকে আধুনিক করতে নিরলসভাবে কাজ করতে চান তিনি। এই লক্ষ্যে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সেবাকে ই-সেবায় রূপান্তর, দুর্নীতি দমনে বিশেষ কমিটি গঠন এবং ডিএনসিসি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার সমস্যা সরাসরি গ্রহণ ও এর দ্রুত সমাধান, প্রতিটি ওয়ার্ড এলাকায় ডিএনসিসি এমিনিটি সেন্টারের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ও সেবা কার্যক্রমে উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা করা, স্বল্প ও মধ্যম আয়ের ব্যবসার জন্য অনলাইন মার্কেট প্লেস প্রবর্তন, পরিবেশবান্ধব রাস্তাঘাট ও এর আধুনিকায়ন, সৌন্দর্যবর্ধন, সব লেক ও খালের সংস্কার এবং সীমিত আয়ের নাগরিকদের জন্য সাধ্যের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হলেও মাত্র এক বছর সময় পাবেন। নতুন অঞ্চলে কাজ করা এবং প্রয়াত মেয়রের সময়ে শুরু হওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো, যেখানে এখনো মানুষের প্রত্যাশা আছে সেগুলো সামাল দেওয়াটাই কঠিন হবে। তাই বেশি প্রতিশ্রুতির জায়গা এড়িয়ে গেলেই ভালো।

লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, মানুষের প্রত্যাশা একটি বাসযোগ্য নগরী যেটা হঠাৎ করেই ঢাকা শহরে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। নির্বাচিত হলেও নতুন মেয়র যে সময় পাবেন তাতে সুস্থ, সচল ও আধুনিক নগরী গড়া অসম্ভব। এই স্বল্প সময়ে বহুতল কিংবা ও ভূগর্ভস্থ পার্কিং কমপ্লেক্স নির্মাণও সম্ভব না। তবে মশা নিধন, বায়ুদূষণ রোধ সম্ভব। এ ছাড়া সামনে যেহেতু বর্ষাকাল, তাই পানি নিষ্কাশন ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থার উন্নতি ঘটালেও নগরবাসী খুশি হবে।