জোটবিরোধী কথা বলা নিয়ে ১৪ দলের বৈঠকে ক্ষোভ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের প্রথম বৈঠক বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সংগৃহীত
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের প্রথম বৈঠক বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি। ছবি: সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় ১৪-দলীয় জোটের প্রথম বৈঠক আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। জোটবিরোধী কথা বলার কারণে শরিক দলের নেতাদের বিষয়ে কয়েকজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিরোধ করতে ১৪-দলীয় জোটের বিকল্প নেই বলেও অনেকে মতামত দিয়েছেন। জোটের ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ১৪-দলীয় জোটের শরিক তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জোটের ভেতরে থেকে জোটের বিরুদ্ধে কথার বিষয়টি তোলেন। তিনি বলেন, বিএনপি যেসব কথা বলে, সেই কথা যদি শরিক দলের নেতারা বলেন, তাহলে পার্থক্য থাকল কোথায়? জোটের অনেক নেতা না পাওয়ার ‘যন্ত্রণায়’ জোটবিরোধী অনেক কথা বলছেন, যা জোটের জন্য ভালো নয়। জোট নিয়ে যদি কারও বিশেষ কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন বলেও নজিবুল বশর মতামত দেন। এ সময় তাঁর এই বক্তব্যের বিষয়ে শরিক দলের বেশির ভাগ নেতা একমত প্রকাশ করেন।

১৪-দলীয় জোটের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে চা-চক্রের পর আজ ১৪ দলের বৈঠক হলো। বৈঠকে নেতারা বলেছেন, চাওয়া-পাওয়া, না-পাওয়া এসব থাকবে। রাজনীতিতে এটা থাকে। তাই বলে ঘরের কথা বাইরে বলা যাবে না। অভিযোগ থাকতে পারে, সেটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু জোটবিরোধী কথা বলা যাবে না। বৈঠকে সুপারিশ এসেছে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় যে সমন্বয় কমিটি আছে, সেসব জায়গায় অনুষ্ঠানগুলোতে ১৪ দলকে সম্পৃক্ত করা হলে ১৪ দল আরও বিকশিত হবে।

সূত্রটি আরও বলছে, ১৪ দলের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন নেতা মিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলেছেন। সেখানে জোটের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করা হবে। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াত জোট নিয়েও আলোচনার বিষয় রয়েছে। তারা যতই আলাদা চলার কথা বলুক না কেন, তাদের আদর্শ এক। এসব বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার বলে সবাই মতামত দেন। যত দিন পর্যন্ত জামায়াত শেষ না হবে, তত দিন পর্যন্ত ১৪-দলীয় জোট থাকবে বলে নেতারা মনে করেন। এ ছাড়া জোট ভুলত্রুটি নিয়ে আলোচনা করবে, তবে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে না বলেও আলোচনা এসেছে।

বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, দুঃসময় ও সুসময়ে ১৪ দল শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিল, আছে। ১৪ দলে সব বিভ্রান্তি কাটিয়ে এখনো অটল ও ঐক্যবদ্ধ আছে। তিনি বলেছেন, ১৪ দল কোনো পদ-পদবির জন্য গঠিত হয়নি। এটি একটি আদর্শিক জোট। শোষণমুক্ত দেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব কাজ করে যাবে ১৪-দলীয় জোট।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৪-দলীয় জোট শেখ হাসিনা সরকারকে ‘চোখের মণির’ মতো রক্ষা করবে। সরকারের ভুলত্রুটি বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরবে এবং বিএনপি-জামায়াত ‘অশুভ শক্তির’ বিরুদ্ধে আগের মতোই সোচ্চার থাকবে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। এ ‘অশুভ শক্তির’ বিরুদ্ধে আগের মতোই ১৪ দল প্রস্তুত থাকবে। এ সময় তিনি বিএনপিকে সংসদে আসার অনুরোধ করেন। সংসদ বর্জন ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি থেকে বিএনপিকে সরে আসার আহ্বান জানান নাসিম।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আদালতের বিষয়, উল্লেখ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, হুমকি-ধমকি দিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। খালেদা জিয়া এখন আর রাজনীতিবিদ নন, একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাত্র। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে বিএনপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সভা-সমাবেশ করতে না দিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। তাদের সময়ে দেশে নৈরাজ্য ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাসহ যা যা করেছে, দেশবাসী তাদের ভোলেনি। বিএনপিকে তখন করা পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে এখন।

এ সময় জাসদের সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৪ দলীয় জোট যে লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল, সে লক্ষ্য এখনো শেষ হয়নি। ১০ বছরে পরাজিত শক্তি এখনো সঠিক পথে আসেনি। নির্বাচনে তারা কোণঠাসা হলেও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। পুনর্নির্বাচনের নামে দলটি নতুন করে চক্রান্ত শুরু করেছে। তাদের আত্মসমর্পণ বা ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত ১৪ দল কাজ করে যাবে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াসহ ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।