তিন বন্ধু অপহরণে পুলিশের সঙ্গে আছেন অন্য বন্ধুরাও

আবদুল্লাহ আল মামুন ও মুসরাফিকুর রহমান
আবদুল্লাহ আল মামুন ও মুসরাফিকুর রহমান

তিন বন্ধুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করার ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যের সঙ্গে ওই তরুণদের আরও দুই বন্ধু জড়িত ছিলেন বলে স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে এসেছে। পুলিশ সেই দুই বন্ধুসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। দুই বন্ধু গাজীপুরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন শ্রীপুর উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকার মো. তরিবুল্লাহ (২১), টাঙ্গাইলের মির্জাপুর সদর এলাকার মনির হোসেন (২৪) ও মজনু মিয়া (৩০)। এর আগে ওই ঘটনায় কালিয়াকৈর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল্লাহ আল মামুন (৩৫) ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিন বন্ধুকে অপহরণ করে ক্রসফায়ারের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন পুলিশের দুই সদস্য। ওই ঘটনায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইবাড়ি এলাকার হান্নান সরকারের ছেলে রায়হান সরকার (২২) বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। মামলায় কালিয়াকৈর থানার এএসআই আবদুল্লাহ আল মামুন ও মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ছয় থেকে সাতজনকে আসামি করা হয়। পরে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য কালিয়াকৈর থানা থেকে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ডিবি পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করে। এ ছাড়া অপহরণের ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মো. তরিবুল্লাহ, মনির হোসেন ও মজনু মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বন্ধু তরিবুল্লা ও পুলিশের সহযোগী মনির হোসেন গতকাল মঙ্গলবার গাজীপুর বিচারিক হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অপহৃত তিন বন্ধুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ওই দুই পুলিশ সদস্যের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন তরুণদের অপর দুই বন্ধু মো. তরিবুল্লাহ ও মনির হোসেন এবং মজনু মিয়া। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন তরিবুল্লাহ তাদের গাড়ি থেকে তাঁর সহযোগীকে নিয়ে নেমে যান এবং পুলিশকে খবর দেন। সেই অনুযায়ী পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের ধরে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে আগেই চুক্তি ছিল, টাকা পেলে তাঁদেরও একটি ভাগ দিতে হবে। ওই দুই পুলিশ সদস্য যখন এর আগে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন, তখন থেকেই তরিবুল্লাহ ও মনির হোসেন তাঁদের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন।

৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল পাঁচটার দিকে রায়হান সরকার, লাবিব উদ্দিন, নওশাদ ইসলাম, তরিবুল্লাহ ও রাকিবুল রহমান বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার জন্য একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তাঁরা গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় শিলা-বৃষ্টি ফিলিং স্টেশনে যান। তখন সাদাপোশাকে কালিয়াকৈর থানার এএসআই আবদুল্লাহ আল মামুন ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এবং মির্জাপুর থানার এএসআই মুসরাফিকুর রহমানসহ ছয় থেকে সাতজন লোক একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ওই যুবকদের গাড়ি আটকান। গাড়ি থেকে রায়হান মিয়া, লাবিব উদ্দিন ও নওশাদ ইসলামকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তিন বন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার শর্তে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁদের দাবিকৃত টাকা না দিলে ক্রসফায়ারে দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: