'আমি টাকা চাই না, হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই'

সড়ক দুর্ঘটনা
সড়ক দুর্ঘটনা

‘শুনেছি গত ৫ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত আমার ছেলেমেয়েসহ যেসব শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে। আমি টাকা চাই না। আমার ছেলে আফসার আহমেদ ও মেয়ে আফিফা আক্তার আফরিনের হত্যাকারী ট্রাকচালক নবীন ও তার সহযোগীর ফাঁসি চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর মোল্লারপুল এলাকায় মালবাহী ট্রাকের চাপায় নিহত ভাইবোনের বাবা শামসুল আলম।

গত ২৮ জানুয়ারি ছিল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া উৎসব। বেলা তখন ১১টা। স্কুল যখন ছুটি হলো, আফিফা আক্তার আফরিন তার অপেক্ষমাণ বাবাকে এসে জানিয়েছিল, ‘সুই-সুতা’ প্রতিযোগিতার মহড়ায় সে প্রথম হয়েছে। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বাবা শামসুল আলম বলেছিলেন, ‘তোমার ভাই এলেই আমরা বাড়ি যাব।’ ছেলে আফসার আহমেদ আসার পর দুই সন্তানকে মোটরসাইকেলে করে রওনা দেন শামসুল। আর বড়জোর ৫০০ মিটার, তারপরই অপেক্ষমাণ মায়ের সঙ্গে দেখা হতো তাদের। ঠিক তখনই ট্রাকের নিচে পিষ্ট হয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেছে দুই ভাইবোন। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জয়দেবপুর এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আফসার, আফিফাসহ গত জানুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিশুশিক্ষার্থী ও এক কলেজছাত্রীর প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ দিনের মধ্যে ১ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন এই আদেশ দেন। চার শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দেওয়া হয়েছে।

এই চার শিক্ষার্থীর মধ্যে চট্টগ্রামে গত ১৬ জানুয়ারি কলেজছাত্রী সোমা বড়ুয়া (১৮) এবং ২২ জানুয়ারি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কাজী মাহমুদুর রহমান (১৪) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। আর ২৮ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় স্কুলশিক্ষার্থী ভাইবোন ফাতিমা আফরীন (১২) ও আফসার হোসেন (১০)।

গত সোমবারও চলতি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় চার শিশুসহ নিহত পাঁচজনের প্রত্যেকের পরিবারকে একই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। নিহত এই পাঁচজন হলো—৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তরায় ফাইজা তাহমিনা (১০), ৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মিরাজ খান (৫), ২ ফেব্রুয়ারি বরিশালে লিজা আক্তার (৯), সিলেটের বালাগঞ্জে আহমেদ রিফাত (৬) ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত চৌধুরী (২৩)।

আফসার ও আফিফার বাবা শামসুল আলম আরও বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়ে নিহত হওয়ার ১৬ দিন পার হচ্ছে। অথচ পুলিশ এখনো ঘাতক ট্রাকচালক ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ আমাকে বলেছে তারা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা গ্রেপ্তারের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’

নিহত দুই শিশুর মা পুতুল বেগম বলেন, ‘পুলিশ আমার ছেলেমেয়ের হত্যাকারীদের ধরছে না। এত দিন চলে গেল হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করবে কি না, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত । এ অবস্থা চলতে থাকলে তাহলে কি আমার ছেলেমেয়ের হত্যাকারীর বিচার পাব না?’

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, দুই শিশু নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাকচালক ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তারে পুলিশ বেশ কয়েকবার তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালিয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে তাঁরা পলাতক। এমনকি চালক ও তাঁর সহযোগী তাঁদের ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ করে রেখেছেন। পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।