ভালোবাসার ভালো বাসায় ছয়টি যুগ

আবু বক্কর ও ছায়েরা দম্পতি। প্রথম আলো
আবু বক্কর ও ছায়েরা দম্পতি। প্রথম আলো

নিজে চলতে পারেন না, কিন্তু স্ত্রীর হাতে লাঠিটা এগিয়ে দিচ্ছেন। স্ত্রীর ভালোবাসাও কম নয়, স্বামীর লাঠিটা ধরে বলছেন, ‘এবার চলো।’ এভাবে বাড়ি ও বাড়ির আশপাশে চলাফেরা করেন তাঁরা। বয়সের ভারে চলতে না পারা মানুষ দুটি একে অপরকে জীবনের শেষ বয়সেও ভালোবেসে চলেছেন। দীর্ঘ ৭২টি বছর ভালোবাসার সংসার করছেন তাঁরা।

মানুষ দুটি হলেন আবু বক্কর মুন্সী (৯২) ও তাঁর স্ত্রী ছায়েরা খাতুন (৮৫)। আবু বক্কর বললেন, ‘আমি কখনো ছায়েরাকে “ছায়েরা” বলে ডাকিনি। ভালোবেসে ওকে ডাকি “ময়না”।’

হতদরিদ্র পরিবারের এই স্বামী-স্ত্রী এখনো খাবার খেতে বসেন একসঙ্গে। আত্মীয়ের বাড়িতে যাবেন, তা–ও দুজন একসঙ্গে। ভালোবাসার মানুষ ছাড়া চলেন না তাঁরা। বৃদ্ধ বয়সেও বাড়িতে অবসর সময়টা কাটাচ্ছেন ভালোবেসে, ভালোবাসায়।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের মৃত তরিবুল্লাহ মুন্সীর ছেলে আবু বক্কর মুন্সী। অভাবের সংসারে জন্ম হওয়ায় তাঁর পড়ালেখা হয়নি। ছোটবেলায় অন্যের বাড়িতে রাখাল হিসেবে থাকতে হয়েছে। কিশোর বয়সে কৃষিশ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করেছেন। পরে মানুষের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে সংসার চালিয়েছেন। তাঁর তিন মেয়ে, এক ছেলে। মেয়ে মনোয়ারা খাতুন, মমতাজ খাতুন ও আলেয়া খাতুন। একমাত্র ছেলে মধু মুন্সী বর্তমানে মোটরগাড়িতে কাজ করেন।

গ্রামেই বিয়ে হয়েছে মেয়ে আলেয়ার। সেই বাড়িতেই থাকেন আবু বক্কর ও ছায়েরা দম্পতি। গতকাল বুধবার ওই বাড়িতে বসেই কথা হয় আবু বক্কর ও ছায়েরা খাতুনের সঙ্গে। তাঁরা শোনান দীর্ঘ জীবনে তাঁদের ভালোবাসার কথা। আবু বক্কর জানান, একই উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে কাজ করতে গিয়ে দেখা হয় ছায়েরা খাতুনের সঙ্গে। তাঁকে দেখেই ভালো লেগে যায়, কিন্তু সে সময় ভালোবাসার কথা প্রকাশ করা সহজ ছিল না। তাই তিনি বিয়ের কথা প্রকাশ করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি ছায়েরাকে বিয়ে করে বাড়িতে আনেন। সেই থেকে আজ অবধি তাঁরা সুখের সংসার করছেন। বিয়ের পরই তিনি ছায়েরা খাতুনকে ভালোবেসে নাম দেন ময়না। এখনো ময়না বলেই ডাকেন।

আবু বক্কর বলেন, কাজে গেলে স্ত্রী ছায়েরা অপেক্ষা করতেন, কখন তিনি বাড়ি ফিরবেন। যেদিন কাজ না থাকত, সেদিন ভালো রান্না করে একসঙ্গে বসে খেতেন।

ছায়েরা খাতুনের ভাষায়, তাঁর স্বামীর মতো স্বামী পাওয়া কষ্টকর। কখনো উত্তেজিত হতে দেখেননি। তাঁর ওপর রাগ করেননি, ভালোবেসে ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের সংসার ছিল ভালোবাসার সংসার। কখনো গোলমাল করেননি।

মেয়ে আলেয়া খাতুন জানান, তাঁর বাবা আবু বক্করই সাড়ে ৫ শতক জমি কিনে দিয়েছেন তাঁকে। সেই জমিতেই তাঁরা বসবাস করছেন।

প্রতিবেশী বজলুর রহমান বলেন, এই দুজনকে দেখে অন্যদের শেখার আছে। কখনো তাঁদের গোলমাল করতে দেখা যায়নি। তাঁরাই প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ।