চোখ দুটি ঘোলা হয়ে আসছে, ছানি কাটাতে হবে। তারই প্রস্তুতিতে ছিলেন পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) ৬৮ বছরের কলা বিক্রেতা আবদুল হামেদ। তবে নির্বাচনের আগে নাশকতার মামলার আসামি হয়ে পাল্টে গেছে অনেক হিসাবনিকাশ। মামলা সামলাতে ৫০ দিন এখানে–ওখানে কাটিয়ে গতকাল বুধবার রাজধানীর হাইকোর্টে এসেছিলেন আগাম জামিন নিতে। চোখের ছানি কাটানোর জন্য যে টাকা জমিয়েছিলেন, তাতে হাত পড়েছে, জমানো টাকার বেশির ভাগই খরচ হয়ে গেছে মামলায়।
হামেদ এসেছিলেন সাতজনের একটি দলের সঙ্গে। হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনে ঢোকার মুখে বসে ছিল দলটি। সেই দলের আরেকজন কাঁচামালের ব্যবসায়ী কবীর হোসেন বলেন, ‘আমরা খুবই গরিব মানুষ। আমরা এক লগে ১০ জন ঢাকায় আসার কথা আছিল। কিন্তু তিনজন টাকা জোগাড় করতে না পারায় শ্যাষ পর্যন্ত আসতে পারেনি।’
হামেদ, কবীরসহ অন্যরা জানালেন, নির্বাচনের আগে গত ২৪ ডিসেম্বর ২৬ জনের নামে বলদিয়া ইউনিয়নে একটি নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্র পোড়ানো ও ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়। বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহীনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকিদের পলাতক উল্লেখ করে মামলা করা হয়।
পিরোজপুরের স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানান, শাহীন চেয়ারম্যান বিএনপির লোক হলেও গত ১০ বছর তিনি আওয়ামী লীগের সাংসদ আবদুল আউয়ালের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। এবার নির্বাচনে ওই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন শামীম সাঈদী। তিনি একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় নামেননি।
কেন মামলার আসামি করা হলো—জানতে চাইলে হামেদ বলেন, ‘আমরা এট্টু বিএনপির কতা কইতাম। তয় কুনোদিন মিছিল–মিটিংয়ে যাইনি। নিজেগো প্যাট চলে না! আর সাঈদীর পোলারে (মনোনয়ন) দিছে পরে আমরা ভোট করতে যাইনি।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে হামেদ বলেন, ‘এত্তো বড় ভোট হইলো এক কাপ চাও কারে ধারে খাইতে পারলাম না, হুদাই মামলা একটা ভইরা দিলো।’
যোগাযোগ করা হলে নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আচ্ছা আচ্ছা বুঝছি, পলিটিক্যাল মামলা তো। ওগুলো এখন শেষ হয়ে যাবে, চিন্তা করতে মানা করেন।’