মা ও ভাবিকে খুন করার কথা স্বীকার করে শফিকুলের জবানবন্দি

রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজের মা ও ভাবিকে খুন করার কথা স্বীকার করে ঢাকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শফিকুল ইসলাম (৩৫)। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত আসামির জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজের বাসায় ছুরিকাঘাতের শিকার হন হামিদা বেগম (৬১) ও শারমিন বেগম (৩৪)। সেদিন শারমিনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হামিদা। এ ঘটনায় নিহত হামিদার ছেলে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সহোদর শফিকুলের বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, শফিকুল তাঁর মা হামিদা এবং তাঁর স্ত্রী শারমিনকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছেন।

দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, আসামি শফিকুল নিজের মা ও ভাবিকে হত্যা করার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা তপন চন্দ্র সাহা বলেন, শফিকুল দরজির দোকান চালাতেন। তবে ব্যবসায় লোকসান দেওয়ার পর গত বছর স্ত্রী শাহনাজ পারভিনের পরিবারের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেন। পাশাপাশি মায়ের কাছ থেকেও টাকা নেন শফিকুল। এই টাকা নিয়ে গত বছরের মার্চে সৌদি আরব যান। বিদেশ যাওয়ার পর প্রায় সময়ই স্ত্রীর মোবাইল ব্যস্ত পেতেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রায়ই মোবাইলে ঝগড়া হতো। বিদেশ যাওয়ার চার মাসের মাথায় জুলাইয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি।
দক্ষিণখান থানার ওসি আরও বলেন, দেশে ফিরে আসার দুই মাসের মাথায় আবারও সৌদি আরব যান শফিকুল। ডিসেম্বরে দেশে ফেরেন আবারও। দেশে ফেরার প্রথম দিনই স্ত্রীকে বেধড়ক পেটান। পরদিন তাঁর স্ত্রী ১০ মাসের সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।

আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, স্ত্রী–সন্তানকে ফিরিয়ে আনার জন্য মা-সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের চাপ দিতে থাকেন শফিকুল। পৈতৃক বাড়ি থেকে মা যে ভাড়া আদায় করতেন, তা মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতেন শফিকুল। এর প্রতিবাদ করলে শফিকুল তাঁর মা হামিদাকে গালিগালাজ করতেন।

পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, শফিকুল তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ পৈতৃক বাড়িতে মা, ভাইসহ সবার সঙ্গে থাকতেন। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়িতে তাঁর (শফিকুল) অংশ লিখে দেওয়ার জন্য মাকে চাপ দিলেও মা এতে রাজি ছিলেন না। এ কারণে মায়ের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন শফিকুল।

পুলিশ কর্মকর্তা তপন চন্দ্র সাহা বলেন, বাড়ির অংশ লিখে না দেওয়ায় মাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন শফিকুল। পরিকল্পনা করে উত্তরার আজমপুর থেকে একটা ছুরি কেনেন। ওই ছুরি দিয়ে আসামি হামিদা ও শারমিনকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন।

আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী শফিকুল সেদিন (১১ ফেব্রুয়ারি) ভাই রফিকুল ইসলামের ঘরে ঢোকেন। সেখানে তাঁর মা হামিদা বেগম ছিলেন। মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করার একপর্যায়ে ছুরি দিয়ে হামিদা বেগমের পেটে আঘাত করেন। তখন তাঁর ভাবি শারমিন চিৎকার করলে তাঁকেও শফিকুল ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শফিকুল নৃশংসভাবে নিজের মা হামিদা বেগম ও ভাবি শারমিনকে খুন করেছেন।