মনসুর সেজে সাজা খাটছেন সাইফুল

একটি মাদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি মনসুর আলম সেজে ফেনী কারাগারে সাজা খাটছেন সাইফুল ইসলাম নামের অপর এক ব্যক্তি। বিষয়টি জানাজানি ও নিশ্চিত হওয়ায় পর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতারণার অভিযোগে তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে ফেনীর আমলি আদালত-৩–এর বিচারক তানিয়া ইসলামের আদালতে পৃথক মামলা করা হয়েছে। মামলায় বাদী হয়েছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী গোলাপ হোসেন।

একই গ্রামে বাড়ি হলেও মাদক মামলার মূল আসামি মনসুর আলমের (৩৫) বাবার নাম মৃত মমিনুল হক ওরফে আমিনুল হক ওরফে আবদুল মমিন। আর সাইফুল ইসলামের (৩২) বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৫০টি ইয়াবা বড়িসহ আটক হন এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা মনসুর আলম। তিনি ফেনী সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের মধ্যম লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা। একই বছরের ৩১ আগস্ট তিনি জামিনে ছাড়া পান। মামলার অভিযোগপত্র দাখিল শেষে মনসুর আলমকে দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, এলাকায় প্রভাবশালী মনসুর তাঁর পক্ষে সাজা ভোগ করার জন্য একই এলাকার সাইফুল ইসলামকে অনেকটা ভয়ভীতি ও চাপের মুখে নাম বদল করে সাজা খাটার জন্য চাপ দেন। মনসুরের প্রস্তাবের একপর্যায়ে সাইফুল ইসলাম সাজা খাটতে রাজি হন। ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর সাব্বির আহমেদ নামের একজন আইনজীবীর মাধ্যমে ফেনীর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। আদালত সাইফুলের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এদিকে এক ব্যক্তির হয়ে অন্য ব্যক্তির কারাগারে সাজা খাটার বিষয়টি বিশেষ একটি আবেদনের মাধ্যমে আদালতের নজরে আসে।

গত ২০ ডিসেম্বর কারাগারে থাকা নকল মনসুরকে আদালতের নির্দেশে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন ও লিখিত জবানবন্দি দেন।

২৩ ডিসেম্বর পুলিশ মনসুর আলমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। বর্তমানে মূল আসামি মনসুর আলম এবং তাঁর পরিবর্তে নাম ধারণ করে সাজা ভোগকারী ব্যক্তি সাইফুল ইসলাম একই মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

আদালত পরে বিচার–বিশ্লেষণ করে ১০ ফেব্রুয়ারি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তানিয়া ইসলাম নাম ও ব্যক্তি বদল করে আদালতের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত মনসুর আলম ও সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মনসুরের নাম ধারণ করা সাইফুলকে আদালতে হাজির করে জামিন প্রার্থনাকারী আইনজীবী সাব্বির আহমদকে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

ফেনী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ প্রতারণার দায়ে দুই আসামির বিরুদ্ধে মামলা ও আদালতে আত্মসমর্পণের সময় সহযোগিতার দায়ে এক আইনজীবীর ব্যাখ্যা তলবের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফেনী মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, মনসুর আলমের বিরুদ্ধে একটিতে সাজাসহ মাদকদ্রব্য আইনে চারটি মামলা রয়েছে।