রোগীদের পাশে শত শত মানুষ

>

• সব মানুষ ছুটে আসে রোগীদের বাঁচাতে
• অ্যাম্বুলেন্সগুলো রোগীদের নিয়ে গেছে বিভিন্ন হাসপাতালে
• শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছুটে আসেন

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যখন আগুন লাগে, তখন শুধু রোগীর সংখ্যাই ছিল এগারো শর বেশি। তাঁদের কেউ কেউ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন, কারও অস্ত্রোপচার হয়েছে, কারও কারও অবস্থা খুবই নাজুক। শঙ্কা ভর করেছিল সবার মনে। এত এত বিপন্ন মানুষ! কী হবে তাদের। তবে শঙ্কার কালো মেঘ তখনকার মতো কেটে গেছে সব মানুষের অংশগ্রহণে।

গতকাল হাসপাতালে প্রথম আলোর চারজন সাংবাদিক উপস্থিত থেকে কাছ থেকে দেখেছেন দুর্ঘটনার পরের ঘটনাপ্রবাহ। এই উদ্ধার অভিযানের কৃতিত্ব আসলে কার? সবাই একমত—কৃতিত্ব সবার। কৃতিত্ব ৯৯৯–এর, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, ছাত্র এবং রোগীদের স্বজনদেরও। রানা প্লাজা ধসের সময় যা ঘটেছিল, হাতে হাত ধরে এগিয়ে এসেছিলেন সাধারণ মানুষ। গতকাল ঠিক তারই পুনরাবৃত্তি হলো। দুর্যোগে এটাই বাংলাদেশ।

ঢাকার অ্যাম্বুলেন্সচালকদের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগের কমতি নেই। কিন্তু আগুন লাগার পরে ভাড়ার চিন্তা না করেই অ্যাম্বুলেন্সচালকেরা লেগে পড়েন রোগী স্থানান্তরে। খুঁজে খুঁজে অসুস্থতা বিবেচনা করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিচ্ছিলেন তাঁরা। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা দল বেঁধে মাঠে অবস্থান নেওয়া রোগীদের কাকে কোন হাসপাতালে পাঠাতে হবে, সেটি নির্ধারণ করছিলেন। বিছানা ধরে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দিচ্ছিলেন।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক উত্তম বড়ুয়া বলেন, মাস দুয়েক আগে হাসপাতালে একটা মহড়া হয়েছিল। সেটি কাজে দিয়েছে। মাঠের কোনায় দাঁড়িয়ে গাড়ির ইমারজেন্সি লাইট জ্বেলে আসা অ্যাম্বুলেন্সের চালক সুজন মিয়া হাঁকছিলেন, ‘পোড়া রোগী কেউ আছেনি? ডিএমসি বার্নে যাইতাছি।’ গাড়িতে মাঠ থেকে কয়েকজন ছুটে এলেন। দুজনকে তুললেন সুজন। প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে এক স্বজন নিতে পারবেন বলে ঘোষণা এল। রোগীর জিনিসপত্রের বস্তা গাড়ির ছাদে তুলে সুজন ছুট লাগালেন।

আরেক চালক মেহেদি চার ট্রিপ মেরে পঞ্চম ট্রিপের রোগী তুলতে এসেছেন। যাবেন মহাখালীর ক্যানসার হাসপাতালে। তিনি জানালেন, ঢাকা মেডিকেল, কেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা সেন্ট্রাল ও মহাখালী হাসপাতালে এর মধ্যে ১২ জন রোগী দিয়ে এসেছেন। যাঁরা খুব বেশি অসুস্থ, তিনি তাঁদেরই খুঁজে খুঁজে তোলার চেষ্টা করছেন।

সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতির প্রচার সম্পাদক লিটন সরদার গাড়িগুলোকে সমন্বয় করছিলেন। তিনি বলেন, তাঁদের ১০০-এর বেশি গাড়ি রোগী বহনে যুক্ত হয়েছে। তাঁরা কোনো ভাড়া নিচ্ছেন না। আটটার দিকে তিনি জানান, দেড় শর বেশি রোগীকে তাঁরা অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।

হাসপাতালের পাশে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সড়কে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো রেখে পানি দেওয়া হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসকে সাহায্য করছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদুর রহমানসহ অন্য নেতারা সেখানে রাস্তা পরিষ্কার রাখা, ফায়ার সার্ভিসকে সাহায্য করার জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। মাসুদুর বলেন, হাসপাতালে আগুন জ্বলতে দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফার্মগেটে কৃষিবিদ মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। খবর পেয়ে ছুটে এসে ফায়ার সার্ভিসকে সাহায্য করতে নামেন। এমন দুর্ভোগে এভাবেই তো এগিয়ে আসে মানুষ।