তিন বছরের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমেছে

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা।

হত্যা, গণধর্ষণ, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো অপরাধসহ দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা কমেছে। গত তিন বছরের তুলনায় গত বছরে এ হার কম ছিল। ২০১৮ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৮০৬টি, যা ২০১৬ সালে ছিল ১ হাজার ৪৭১টি।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠন করেন। তিনি বলেন, গত সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এক সংবাদ সম্মেলনে আমরা বলেছিলাম, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনমনে শঙ্কা, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা বাড়ছে। কেননা নব্বই–পরবর্তী স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনগুলো কখনোই এদের কাছে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসেনি।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা বলতে চাই, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসনীয় ভূমিকায় এবারের নির্বাচনের আগে ও পরে সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি।’ ফেনীর সোনাগাজী, ঠাকুরগাঁও সদর, রাঙামাটির লংগদু, বাঘাইছড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে তিনি বিচ্ছিন্ন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৮ সালে এ দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৬ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ছিল ১ হাজার ৪৭১টি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৪টি আর গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ঘটনা এসে দাঁড়িয়েছে ৮০৬-এ। গত বছরে ঘটে যাওয়া ঘটনার মধ্যে ৯০ জন হত্যার শিকার হয়েছেন, মরদেহ উদ্ধার হয়েছে ১৫ জনের (প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ড বলে প্রতীয়মান), কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে শাস্তির ঘটনা ১০টি, ৩৯টি অপহরণ, ধর্ষণের ঘটনা ৩২টি, গণধর্ষণের ঘটনা ১৬টি, ধর্ষণচেষ্টা ১৪টি, প্রতিমা ভাঙচুর ১৬৯টি, শ্মশান, মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখল ২১টি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ৫৮, দেশত্যাগের হুমকির ঘটনা ১১৫টিসহ গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮০৬টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নির্যাতন–নিপীড়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।

রানা দাশগুপ্ত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নিজস্ব তথ্যসূত্রের আলোকে গত তিন বছরে সংখ্যালঘুদের ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তার ইশতেহারে প্রথমবারের মতো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স অঙ্গীকার করেছে। আমরা বাস্তবে এর প্রতিফলন চাই।’

গত সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বারবার নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অনেক সমালোচনা করা হয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল তারা মেনে নেয়নি। তবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলছে যে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। এর কারণ কী?

সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের ফল নিয়ে কোনো বক্তব্য দিইনি। এটি আমাদের কাজ নয়। সেটি নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করব না। আমরা শুধু বলতে চেয়েছি, নির্বাচনের আগে ও পরে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যে নির্যাতনের শিকার হয়, এবারের নির্বাচনের পরে সেটি হয়নি। এ জন্য নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সব রাজনৈতিক দলের ভূমিকার প্রশংসা করছি।’

এবারের নির্বাচনে কোনো দল ধর্মকে ব্যবহার করে প্রচার করেনি জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, এটি অত্যন্ত ভালো দিক। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলো প্রশংসার দাবিদার। তবে নির্বাচনের ফল নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। এ সময় তিনি রাষ্ট্র ধর্ম বিলোপের দাবি জানান। রাষ্ট্র ধর্ম রেখে সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না বলেও তিনি মত দেন।

সংবাদ সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার। আরও বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক।