জামায়াতের বিলুপ্তি চেয়েছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক

আবদুর রাজ্জাক
আবদুর রাজ্জাক

জামায়াতে ইসলামীকে বিলুপ্ত করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বলেছিলেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভরাডুবির পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এই মতামত দেন দলটি থেকে সদ্য পদত্যাগী এই নেতা। তিনি দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।

আবদুর রাজ্জাক আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, তিনি জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগ করেছেন। আবদুর রাজ্জাক যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী ছিলেন। যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ার ৫ দিনের মাথায় তিনি দেশ ছাড়েন। রাজ্জাক যুক্তরাজ্যেরও নাগরিক। এখন তিনি সেখানেই বসবাস করছেন।

রাজ্জাক তাঁর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদের কাছে। সেখানে তিনি মকবুল আহমাদকে ‘পরম শ্রদ্ধেয় মকবুল ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন।

যুক্তরাজ্য থেকেই তিনি পদত্যাগপত্রটি পাঠান। পদত্যাগপত্রের এক জায়গায় আবদুর রাজ্জাক লেখেন, ডিসেম্বরের নির্বাচনের (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) পর জানুয়ারি মাসে জামায়াতের করণীয় সম্পর্কে আমার মতামত চাওয়া হয়। আমি যুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে দায়দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিই। অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে বলেছিলাম, জামায়াত বিলুপ্ত করে দিন।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পদত্যাগের পেছনে আবদুর রাজ্জাক দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন। এতে বলা হয়, জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি। একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতার আলোকে ও অন্যান্য মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনকে বিবেচনায় এনে দলটি নিজেদের সংস্কার করতে পারেনি।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং নতুন নামে দল গঠন করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রস্তাব সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে জামায়াতে ইসলামীতে। দলটির নেতৃত্বের একটা অংশ এ ধরনের প্রস্তাবের পক্ষে। এই অংশ একাত্তরের ভুল স্বীকার করে বর্তমান নামে দলকে সচল রাখতে অথবা নতুন নামে দল গঠন করতে চায়।

গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার জন্য সম্প্রতি দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের জরুরি সভা হয়। দলের তরুণ নেতৃত্বের দাবির মুখে সভায় একাত্তরের ভুল রাজনৈতিক ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং জামায়াত নামক দল বিলুপ্ত করে সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে দলকে নিয়োজিত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা মজলিশে শুরায় অনুমোদন পায়নি। সেখানে ২০-দলীয় জোটে আর না থাকা ও কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে প্রায় সবাই একমত হন।

নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তারা দলীয় প্রতীক হারিয়েছে। তাদের কাজ করতে হচ্ছে গোপন দলের মতো।

রাজ্জাক পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘অতীতে আমি অনেকবার পদত্যাগের কথা ভেবেছি। কিন্তু এই ভেবে নিজেকে বিরত রেখেছি যে, যদি আমি অভ্যন্তরীণ সংস্কার করতে পারি এবং ’৭১ এর ভূমিকার জন্য জামায়াত জাতির কাছে ক্ষমা চায়, তাহলে তা হবে একটি ঐতিহাসিক অর্জন। কিন্তু জানুয়ারি মাসে জামায়াতের সর্বশেষ পদক্ষেপ আমাকে হতাশ করেছে।’

পদত্যাগপত্রের শেষ দিকে রাজ্জাক জামায়াতের নেতাদের প্রশংসা করেন। তিনি লেখেন, ‘গত ১০ বছরে জামায়াত নেতৃবৃন্দ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছেন। তা এখনো অব্যাহত। এটি প্রশংসনীয় যে এই কঠিন ও বৈরী সময়েও ব্যাপক কষ্ট এবং অসীম ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে জামায়াত নেতৃবৃন্দ দলের ঐক্য বজায় রেখেছেন। দলের প্রতি তাদের নিষ্ঠা এ একাগ্রতা অনস্বীকার্য।’ রাজ্জাক উল্লেখ করেন, এখন থেকে তিনি নিজস্ব পেশায় আত্মনিয়োগ করতে চান।